ঢাকাশুক্রবার , ২৪ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অপরাধ এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ২৪, ২০২০ ৯:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমরা একটা কাজ খুব ভালো পারি, একটা অপরাধের বিবেচনায় আরেকটা অপরাধকে হালকা করে দিতে। সমাজে চলতে পথে এরকম বহু ঘটনা চোখের সামনে চলে আসে যা দেখতে এবং শুনতে প্রচন্ড ঘেন্না লাগে। মানুষ এগুলো নিয়ে কতটুকু ভাবে আমি জানিনা। তবে আমার প্রচন্ড ভাবনা আসে, আমরা কেনো এত হিপোক্রেট! আমরা নিজের মতের বাইরে ভালো কিছু যেমন গ্রহণ করতে পারিনা তেমনি নিজের মতের মধ্যে খারাপ কিছুকে বর্জনও করতে পারিনা৷ আমি এরকম বেশ কিছু ঘটনা দেখেছি।

একবার এলাকার জমি নিয়ে দুই পক্ষের একটা বিরোধ দেখেছি। সেখানে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পরে এটা কোর্ট পর্যন্তও গড়িয়েছে।পরে কয়েক দফা গ্রাম্য সালিসে ঘটনা মিটমাট হয়ছে, ফলে উভয় পক্ষই মামলা তুলে নিয়েছে। সে ঘটনায় এলাকার এক প্রবীণ মাতবর ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে শুনেছি। বাকি মাতবররাও ঘটনা মিমাংসা করতে এরকম উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। কেউ কম কেউ বেশি। তবে উৎকোচ গ্রহণের ব্যাপারে ওই মাতবরের যুক্তি হলো, যদি হুজুররা এক ঘন্টার একটা ওয়াজ করে ৫০ হাজার টাকা নিতে পারে, তাহলে আমি কেনো ৭ দিন সালিশ করে ভয়ানক একটা ঘটনা মিমাংসা করে ৭০ হাজার নিতে পারব না!!! দর কষাকষি করে হাদিয়া নেয়া যেমন অবৈধ কাজ তেমনি বিচার সালিসে ঘুষ গ্রহণ করাও অবৈধ এবং গোনাহের কাজ। কিন্তু আমরা কি করি দুইটা অবৈধ কাজকে মাত্রা দিয়ে বিবেচনা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অবৈধ কাজকে স্রেফ অবৈধ মনে করে এরকম লোক খুবই কম।

রাজনীতিতে একটা কমন ঘটনা ঘটে। যদি কোনো দলীয় পদধারী কোনো লোক ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায় করে তাহলেও তার ব্যক্তিগত অন্যায়কে দলের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সেটা যেই দলের লোকই করে থাকুক। আবার দলীয় ব্যক্তির ভালো কাজকে ভাবা হয় স্রেফ ব্যক্তির। যেমন আলোচিত বদরুল কাহিনী অামরা জানি, এই ঘটনা স্রেফ বদরুল একাই ঘটিয়েছিলো এখানে অন্য কারো বা কোনো সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না, যেটা বদরুল এবং খাদিজা উভয়ের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। অথচ বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ লিংকের কমেন্ট বক্সে এখনো ছাত্রলীগকে ‘বদরুল লীগ’ হিসেবে কটাক্ষ করা হয়। অাবার পক্ষান্তরে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বা জুনায়েদ সাকী যদি ভালো কোনো এজেন্ডা নিয়ে কোনো অান্দোলন থ্রো করেন সেখানেও তাদের ক্রিটিসাইজ করা হয়। এরকমটা দেখেছি সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ক্ষেত্রেও।তাদের ভালো কাজকেও অনেক কটাক্ষ করা হয়। আমরা ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলতে এখনো শিখি নাই। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন যে, নিজের অপছন্দের কেউ ভালো কাজ করলেও সেটাকে অামরা মেনে নিতে পারিনা। মনে মনে প্রচন্ড হিংসা করি। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি ইসলাম ধর্ম বর্তমান সময়ে নাজিল হতো তাহলে আমরা কয়জন পিতৃ পুরুষের অাইডোলজি তথা নিজের আইডোলজি ছেড়ে নতুন আইডোলোজি গ্রহণ করতে পারতাম!!! আমরা যে  রিমাণ হিপোক্রেট এবং যে পরিমাণ বিদ্বেষ পোষণ করি!!!

বিভিন্ন নিউজের কমেন্ট বক্স দেখলে খুব শঙ্কিত হয়ে যাই আশেপাশে এতো বিকারগ্রস্ত লোক! অবাক না হয়ে পারিনা। কিছু লোককে দেখা যায় মৃত্যু নিয়েও সেখানে হাসিঠাট্টা করতে। ধর্ষণের খবরেও উল্লাস প্রকাশ করতে! এরকম একটা হাদিস আছে যে, কিয়ামতের সন্নিকটে মানুষ মৃত্যু নিয়েও হাসাহাসি করবে। কিয়ামত মানে হলো মহাপ্রলয়, মহা ধ্বংস৷ সারা পৃথিবীর অবস্থা বিবেচনা করলে বলতেই হয় এই মহাপ্রলয় সত্যি খুব সন্নিকটে। বর্তমানে যে হারে মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে, মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটছে তা নজিরবিহীন। করোনার এই দুঃসময়ে আমাদের সামাজিক পারিবারিক অবস্থা সত্যিই খুব ভাবাচ্ছে অামাকে। মা কে জঙ্গলে ফেলে রেখে যায় সন্তান, স্বামীর লাশ পড়ে থাকে ঘরের দরজায়, হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় করোনার রোগী, চিকিৎসা অভাবে মারা যায় সন্তানসম্ভাবা নারী, ত্রানের জন্য ধর্ষিত হয় কিশোরী, ত্রাণের চাল পাওয়া যায় পুকুরে, খাটের নিচে টিসিবির তৈল। সত্যি অবাক না হয়ে পারিনা। অার কত নিচে নামব আমরা!

সম্প্রতি দুইটা ঘটনা দিয়ে শেষ করছি, অামার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জুনিয়র সে এলাকায় ত্রাণ বিতরণসহ সেচ্ছাসেবীর কাজ করে, সে সমাজের মানুষকে বারবার সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে সচেতন থাকতে বলায় এলাকার মানুষজন বিরক্ত হয়ে তাকেই একঘরে করে দিয়েছে। এই হলো আমাদের অবস্থা! বিষয়টা হলো এমন যে, আমি মরে যাই যাবো তুমি বলার কে! যারা সবসময় আত্মহত্যা করতে চায় তাদের আপনি কতক্ষণ চোখে চোখে রাখবেন!! গতকালকে বাজারে লোকসমাগম নিয়ে আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আসলে দেশে হচ্ছেটা কী?

এবার আসি গার্মেন্টস কাহিনী নিয়ে, বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে দিতে যতটুকু সর্বনাশ করেছে এই বিজিএমই ততটুকু বোধহয় অার কেউ পারেনি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কথা অামরা সবাই জানি। সেখানে কি হচ্ছে অামরা তাও জানি কিন্তু দুঃখের বিষয় এ থেকে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজন শিক্ষা গ্রহণ করেছে, না করেছে পুরো দেশ! পুরো দেশের লোক শুধু ট্রল করে হাসিঠাট্টা, মজা করেছে। তা দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজন তাদের ফিরিস্তি গেয়েছে কি কি তাদের অবদান এসব। মোট কথা আমরা নিজেদের ডিফেন্স করেছি। ওই যে, প্রথম যে কথাটা বললাম, আমরা একটা অপরাধকে আরেকটা অপরাধের মাত্রা দিয়ে বিবেচনা করি।

যদি আমাদের পক্ষে যায় বিষয়টা তাহলে তো সোনায় সোহাগা যদি বিপক্ষে যায় তাহলে এর থেকে আরো বড়বড় অপরাধের কথা আলোচনা করে বলি অমুক অমুক অপরাধের তুলনায় এটাতো ক্ষুদ্রই। যে পর্যন্ত এসব স্বীকার করতে না শিখবো সে পর্যন্ত কখনোই জাতীয় মুক্তি আসবেনা।

সরকারের ক্ষেত্রেও আমরা এরকম দেখেছি। যদি সরকার কোনো ভুল করে তাহলে বারবার বলে এগুলো বিএনপির দোষ বা বিএপির আমলে এসব ঘটেছে ইত্যাদি। বিএনপির আমলে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে তো আপনাদের দুর্নীতি সূচকে ১৩, ১৪ নাম্বারে থেকে বছর শেষ করা জনগণ মেনে নিবে কেনো!!! বড় অপরাধের বুলি আওড়িয়ে ছোট অপরাধকে বৈধ করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ সাগর চুরি যেমন অপরাধ, পুকুর চুরিও অপরাধ।

ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা, সততা, সত্য কথা বলার চর্চা করতে হবে আমাদের। তাহলে যেকোনো সমস্যা থেকে সহজেই উত্তরণ ঘটবে। অপরাধ হলো ছাইচাপা আগুনের মত যতই ঢেকে রাখুন কোনো লাভ হবেনা, হালকা বাতাস এলেই দাওদাও করে জ্বলে উঠবে। পুড়িয়ে দিবে নগর, দেশ, জাতিকে….। আসুন বিদ্বেষ  দূর করি… ভালো থাকি।

খালেদ সাইফুল্লাহ ইলিয়াছ

কবি ও সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। 

Comments

comments