ঢাকাশুক্রবার , ১৫ মে ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মহামারি এবং আমাদের ধর্ম 

প্রতিবেদক
Kolom 24
মে ১৫, ২০২০ ৮:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম কী বলে?  তা যদি আমরা জানতে চাই তাহলে জানতে হবে বেশকিছু হাদিস যা আমাদের চমকপ্রদ তথ্য দেয়। এই ধরণের মহামারী সম্পর্কে মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হযরত মোহাম্মদ (স.) আমাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান মুসল্লিগণ গুজব, বিভিন্ন মুখরোচক বয়ান শুনতে এবং মেনে চলতে উৎসাহী হলেও, দ্বীনের এই সুন্দর নির্দেশনা সমূহের ব্যাপারে কেনো যেনো উদাসীন।বিভিন্ন মাধ্যমে যখন এই হাদিসগুলো দেখেছি তখন বেশ অবাক হয়েছি আজ থেকে প্রায় ১৪শত বছর পূর্বের এই নির্দেশনা হুবুহু মিলে যাচ্ছে আধুনিক সময়ের সাথে। মনে হচ্ছে সবগুলো নির্দেশনা হয়তো একটু আগেই উচ্চারিত হলো।কত মহামান্বিত সে বাক্যগুলো সব সময়ের সব কালের জন্যই যেনো উচ্চারিত!!  আসুন দেখে নেয়া যাক কী এই নির্দেশনা…..

১) “যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।“ (বুখারি, আস-সহীহ ৫/২১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৩৮, ১৭৩৯)

২) “কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে যায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে যায়গায় যেয়ো না।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)

উপরোক্ত দুইটি হাদিস যদি আমরা মেনে চলতাম তাহলে কিন্তু আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।আমরা সহজেই এই বৈশ্বিক মহামারি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হতাম….

৩) মহামারি অঞ্চলে প্রবেশ করা কিংবা মৃত্যুর ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। (আউনুল মাবুদ, ৮ম খণ্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা।)

হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অনেক রুগী পালিয়ে বেড়াইছে এই শহর থেকে ওই শহর ওই গ্রামে।তারপর হাসপাতাল গুলোতে রোগ লুকিয়ে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা তো আাছেই।আমরা প্রকৃতপক্ষে না বুঝি শরিয়ত না বুঝি মানুষ!

৪) মহানবী রাসুল (স.)  বলেছেন, “রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সাথে একত্রে পানি পানের যায়গায় না আনা হয়।“( বুখারি ৫৭৭১)

অর্থ্যাৎ অসুস্থকে সুস্থের কাছে যেতে নিষেধ করা হইছে।

এই যে আমরা রোগ লুকিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বেড়াইলাম, সুস্থ মানুষগুলোর সংস্পর্শে গিয়ে তাদেরও অসুস্থ করে দিলাম তাহলে এটা কী অধর্ম হয়নি??

তারপর আসুন জেনে নেয়া যাক আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ হাদিস…

৫)জাবির ইবন্ আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন “যে ব্যক্তি ফল বিক্রয় করে এরপর দূর্যোগ কবলিত হয় তাহলে সে তার মুসলমান ভাই হতে এর মূল্য গ্রহণ করবেনা।অতপর তিনি আবার বলেনঃ কিসের বিনিময়ে তোমাদের কেউ তার মুসলমান ভাই হতে তার মাল গ্রহণ করবে? (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৫২৮)

বর্তমান সময়ে মেস ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরণের উৎকন্ঠা কাজ করছে।এই দুর্যোগকালীন সময়ে যদি তাদের মেস বা বাসায় অবস্থান করতে না দেয়া হয় তাহলে কিন্তু হাদিসের আলোকে আমরা এরও সমাধান পেয়ে যাচ্ছি। অবশ্য কোরআন,হাদিস বিশ্বাসীদের জন্য নির্দেশনা,যা অবিশ্বাসীদের জন্য নয়…..

তারপর আসুন একটি ঘটনা জেনে নেয়া যাক……

হিজরি ১৮ সালে মুসলিমরা বাইজেন্টাইনদের সাথে লড়াই করছিল। তখন খিলাফতের ২য় খলিফা হয়রত উমর (রা.) আমিরুল মুমিনিন। সেই সময় সিরিয়ায় ইমাউস প্লেগ নামে রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। প্রায় ২৫ হাজার মুসলিম এতে শহিদ হয়েছিলেন। আক্রান্তদের মধ্যে মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.), আবু উবাদাহ (রা.) মতো বিখ্যাত সাহাবিরাও ছিলেন। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবির ইন্তেকালের পর প্লেগ উপদ্রুত জনপদে মুসলিমদের সেনাপ্রধান আমর ইবনুল আস (রা.) সবাইকে ডেকে বললেন,”মনে রাখবে, প্লেগ আগুনের মতো। সবাই একসঙ্গে থাকলে তা সবাইকে ধ্বংস করে দেবে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে সবাইকে ধ্বংস করতে পারবে না।” তিনি এ মহামারি মোকাবেলায় সবাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সমাজিক দূরত্বের আদেশ জারি করেন। যাতে কেউ কারও সঙ্গে মিশতে না পারে। এভাবে আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে তারা দীর্ঘ দিন পাহাড়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকেন এবং একসময় সবাই মহামারী থেকে মুক্তি পান।

(ইবনে হাজর আসকালানী (র.) মহামারি সম্পর্কে তার অনবদ্য ‘বজলুল মাউন ফি ফাজলিত তাউন’ গ্রন্থে এ ঘটনাটি  উল্লেখ করেছেন।)

এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পেলাম???

কেউ যদি আল্লাহর নবীর সাহাবীদেরও অনুসরণ করতো তবুও সে ইহকালীন পরকালীন মুক্তি লাভ করতো।

মহামারির সময় আবেগ ভালোবাসার থেকে জরুরি হলো রাসূলের নির্দেশনা কী এই সম্পর্কে তা জানা এবং মেনে চলা। যদি সেই নির্দেশনা আমরা পালন করতে পারি তাহলে আমাদের কল্যাণ সুনিশ্চিত অন্যথায় এর ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে….

যারা এই কঠিন সময়ে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশনা সমূহ মেনে চলবে সওয়াবের আশায় সবুর করবে তাদের জন্য ইসলাম ধর্মে রয়েছে অনেকগুলো ঘোষণা।নিশ্চয় পুরস্কার বিশ্বাসীদেরই প্রাপ্য…

৬)মহানবী (স.) বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি মহামারীর সময় ধৈর্যসহকারে নিজেকে সওয়াবের আশায় ঘরে রুদ্ধ রাখবে এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখেছেন এর বাইরে কিছুই ঘটবে না, সে শহীদের মর্যাদা ও বিনিময় লাভ করবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৪৭৪ ও মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৬১৩৯)

আজকে আমরা আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করছি যে বা যারা এই মহামারিতে মারা যাচ্ছেন তাদেরকে আমরা অন্য চোখে দেখতেছি।মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবথেকে খারাপ মন্দ মানুষ এরা।অথচ শরিয়তে তাদেরকে দেয়া হয়ছে বিশেষ মর্যাদা।এবং এ বিষয়ে হুজুর (স.) এর নির্দেশনাগুলো একদমই স্পস্ট। যারা এ বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করবে বরং তাদেরই সংশোধন হওয়া প্রয়োজন….

৭) আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.)  বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ- মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮২৯)

৭) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৩০)

গতকালকে যখন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার করোনায় মারা গেলেন তখন একদল লোককে দেখলাম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে হাসি ঠাট্টা করতে।অথচ হাদিসে মহামারিতে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে দেয়া হইছে স্পষ্ট নির্দেশনা।
উনি যদি আদতে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে মারা যেয়ে থাকেন তাহলে যারা আপনারা উল্লাস প্রকাশ করলেন তাদের হিসেবটা কী হবে শরিয়ত অনুসারে একবারো ভেবে দেখেছেন কী??
আমাদের সকলেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে এরপর থেকে করোনাক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা যেনো কেউ কোনো খারাপ ধারণা পোষণ না করি।
আমরা বাংলাদেশীরা সবসময় নিজেদের ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে দাবি করি নিজেদের অথচ ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো, হাদিসগুলো আমরা জানতে বুঝতে কমই চাই। বিষয়টা এমন যেনো, বেহেশতে আমরা সবাই যেতে চাই কিন্তু আমরা আমলের বেলায় সবাই নাখোশ।
এই যে মহামারির সময় আমরা গণজমায়েত করতেছি, খোশ গল্প, শপিং করতেছি। শরিয়ত কিন্তু তা অনুমোদন করেনা। বরং সুন্নাত অর্থ্যাৎ হাদিসের খেলাপ করাও কিন্তু ভয়াবহ অপরাধ।আমরা কে কতটা ধর্মপ্রাণ তা প্রকাশ পাবে আমাদের কাজকর্মে চলাফেরায় …. আসুন সবাই আমরা সংশোধন হই….
আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দিন।আমিন।

খালেদ সাইফুল্লাহ ইলিয়াছ

কবি ও সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। 

Comments

comments