ঢাকাশনিবার , ১৬ মে ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শিক্ষা ও গবেষণায় আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি

প্রতিবেদক
Kolom 24
মে ১৬, ২০২০ ৯:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট আবিষ্কৃত এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনের সফলতার দিকে চেয়ে আছে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পৃথিবীর কয়েকশ কোটি মানুষ। ইতিমধ্যেই কিছু বুদ্ধিজীবি আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে  করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে না পারায়  আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে গবেষণার জন্য যে পরিবেশ, সুযোগ সুবিধা, আগ্রহ, স্বদিচ্ছা এবং শিক্ষা ও গবেষণাখাতে যে বরাদ্দ সেটা দিয়ে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারতো দূরের কথা এক বোতল ইদুর মারা বিষ আবিষ্কার করাও সম্ভব না।

শিক্ষাখাতে বাংলাদেশ জিডিপির যত অংশ ব্যয় করছে, তা দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন; ২০১৬-১৭ বছরে মালদ্বীপ ৪.২৫ শতাংশ, নেপাল ৫.১০ শতাংশ এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের বরাদ্দ ছিল ৩.৯৩ শতাংশ; অথচ সে বছর বাংলাদেশের বরাদ্দ ছিল  জিডিপির মাত্র ১.৫৪ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণার পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণের দিকেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মনোযোগ বেশি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ৪৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসির প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক বাজেটের মধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ৬৪ কোটি  টাকা। ইউজিসির বরাদ্দের বাইরেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯৭ কোটি এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ৩৫২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে উদারহস্তে অর্থ ব্যয় করলেও গবেষণায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে ততটাই কার্পণ্য দেখাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর গবেষণা সহায়তা খাতে আয় করেছে প্রায় ৬,২০০ কোটি টাকা এবং যুক্তরাজ্য সরকার করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য সারাহ গিলবার্টের টীমকে অতিরিক্ত আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গবেষণাখাতে বরাদ্দ ছিলো ১৪ কোটি টাকা; যার মধ্যে মাত্র ৮ কোটি টাকা গবেষণার জন্য খরচ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। অধিকাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় কোন বরাদ্দই নেই। আর অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গজিয়ে ওঠা বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটা মশার কয়েল আবিষ্কার করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।

একথা সত্যি বর্তমানে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারনে কিছু অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে।কিন্তু যে সমস্ত প্রকৃত মেধাবী শিক্ষক নিরলস গবেষণাকর্মে যুক্ত আছেন তাঁদের জন্য আর্থিক বরাদ্দ,গবেষণার উৎসাহ, পরিবেশ, প্রনোদনা, প্রাইভেট রিসার্স গ্রান্ট এতটাই হাস্যকর পর্যায়ের যে ধীরে ধীরে গবেষণার প্রতি আগ্রহই হারিয়ে যায়।ভালো মানের গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার বা স্বীকৃতির ব্যবস্থা নেই; গবেষকদের আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহনের জন্য হাস্যকর ও যৎসামান্য বরাদ্দ এবং গবেষণার প্রকৃত মূল্যায়ন না থাকায় ভালো মানের গবেষকরা ধীরে ধীরে বিদেশমুখী হয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতি বছর সরকারী কর্মকর্তারা  কারনে অকারনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পুকুর খননের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ ভ্রমণে যান।পাটের জীবনরহস্য উম্মোচন করে বিজ্ঞানি মাকসুদুল আলম যে সম্মাননা পান বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার এক ম্যাচে  সেঞ্চুরি করলে তার চেয়ে বেশি পুরস্কার পান।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হলে একরুমে এমনকি একই বিছানায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়; ডাইনিংয়ের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের ও পুস্টিহীন ; অনেক শিক্ষার্থী বছরে একটা ডিম বা এক গ্লাস দুধ খেতে পায়না। এই শিক্ষার্থীরা ল্যাবে বসে করোনা নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে তাঁদের ব্যস্ত থাকতে হয় বিছানায় ছারপোকার জীবনরহস্য, বংশবিস্তার ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং ডাইনিংয়ে ডালের গামলায় ডাল আর পানির অনুপাত নিয়ে গবেষণায়।তাছাড়া শিক্ষকতা বা গবেষণায়  আকর্ষনীয় মুল্যায়ন নেই; বরং বিসিএস ক্যাডার হলে বাড়ি,গাড়ি, মধু, বধু, তেল, জল, চাকর, বাকর, পাইক, পেয়াদা, রাধুনি, বাবুর্চি, প্রভাব, প্রতিপত্তি, সালাম, কালাম, দেশ, বিদেশ সবই পাওয়া যায়; তাই এখন সবাই ছুটছে বিসিএস ক্যাডারের পেছনে;ভাবতেই অবাক লাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং, ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার এমনকি বুয়েটের ইন্জিনিয়ার পর্যন্ত বিসিএস পুলিশ কিংবা প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করছে।বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর সমাজের জন্য নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করেনা বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে বাজারের বিসিএস গাইডে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারক সারাহ গিলবার্টের নাম মুখস্ত করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক অর্থে একেকটি বিসিএস কোচিং সেন্টারে পরিণত হয়েছে।

তবে সারা বছর হলের ডাইনিংয়ে পাতলা ডাল আর পাঙ্গাস মাছ খেয়েও আমাদের দেশের যেসব মেধাবী তরুন নিজস্ব উদ্ভাবনীতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে তাতে কোন সীকৃতি, মূল্যায়ন বা আগ্রহ নেই বললেই চলে। এর চেয়ে শাকিব খান -অপু বিশ্বাসের ডিভোর্স কিংবা সৃজিত-মিথিলার বিয়ে নিয়ে আমাদের আগ্রহ বেশি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল নাসা আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।তবে মজার বিষয় ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় বিজয়ী দলের শিক্ষার্থীরা কেউ পুরস্কার নিতে যুক্তরাস্ট্রে যাওয়ার অনুমতি না পেলেও তাদের সহযোগী হিসেবে মন্ত্রনালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত সরকারি খরচে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে আসেন।

দেশে যেসব গবেষকদের কেরানীর চেয়েও কম মূল্যায়ন করা হয় বিদেশের মাটিতে সেই ছাত্র, শিক্ষক, গবেষকরা যুগান্তকারী আবিস্কার করে সারা পৃথিবীতে হৈচৈ ফেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ড. কাজী রুশদীর নেতৃত্বে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বিখ্যাত এমআইটির একদল গবেষক যক্ষা নির্ণয়ের কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছে।বর্তমানে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু আলী ইবনে সিনার দল ক্যান্সার শনাক্তকরণে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা করার মতই সহজ নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর ‘নাসভ্যাক’ নামের হেপাটাইটিস-বি চিকিৎসায় নতুন ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বর্তমানে আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেমায়েত উল্লাহ ও তাঁর দল এক ওষুধেই বহু ভাইরাস দমনের ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য মাইলফলক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

এরকম শতশত বাংলাদেশী শিক্ষক, গবেষক বিদেশের মাটিতে সফলতার সাথে নতুন নতুন আবিষ্কার করছে।এরপরেও আপনারা বাংলাদেশের গবেষকদের সক্ষমতা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন?

আপনারা  বিসিএস ক্যাডারকে কোটি টাকার গাড়িতে চড়াবেন ; ঘুসখোর অফিসার সবচেয়ে ভাল বউ পাবে;বালু ব্যবসায়ী, ট্রাকের হেলপার রাজপ্রাসাদ বানাবে; আমেরিকায় সেকেন্ড হোম বানাবে রাজনীতির ব্যবসায়ী; সুইস ব্যাংকে টাকার পাহাড় গড়বে পাপিয়া গং; হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পাবে গার্মেন্টস মালিক; এক ম্যাচ জিতলেই কোটি কোটি টাকা, ফ্ল্যাট, প্লট বোনাস দিয়ে মাথায় তুলে নাচবেন ক্রিকেটারদের নিয়ে; ভিভিআইপির মর্যাদা পাবে নায়ক-নায়িকা,গায়ক-গায়িকা; উন্নয়ন বাজেটের সব টাকা দিয়ে বড় বড় ভবণ নির্মাণ করবেন; আর বিপদের সময় করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে বলবেন সারা বছর অভাব ও ঋণে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর গণরুমে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপনকারী, ছারপোকার কামড় ও লঙ্গরখানার পানি টলটলে ডাল খাওয়া অপুষ্টিতে ভোগা শিক্ষার্থীদের !

যেদেশে বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের চেয়ে হিরো আলমকে নিয়ে মাতামাতি বেশি হয় সেদেশে আর যাই হোক গবেষণা আশা করা যায় না!

লেখক: উজ্জল হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments