ঢাকারবিবার , ৭ জুন ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অন্য রকম দিন যাপনে ‘করোনাকালের চালচিত্র’

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুন ৭, ২০২০ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লকডাউন!!! ছোট্ট একটি শব্দ। যে শব্দের কথা বইয়ের পাতায় দেখেছি কালেভদ্রে, কখনও হয়তবা দেখাই হয়নি। চোখে আঙুল দিয়ে এই লকডাউনকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে এবং মানতে হবে জীবনে কোনদিন ভাবিনি। শুধু আমি কেন? আমরা কেউই কোনদিন ভাবিনি। কিন্তু কপালের লিখন খন্ডায় কে?

আর সেকি লকডাউন! ১,২,৩ দিন নয় বা সপ্তাহ নয় একেবারে গুণে গুণে টানা ৭০ দিন, পাকা ১০ সপ্তাহ। অর্থাৎ পাক্কা ০২ মাসের বেশি। ভাবা যায়? ভাবা যায়না। অথচ এটাই এখন বাস্তব, এটাই এখন সত্যি। এই দু ‘মাসে শুধু লকডাউন কেন? আরও জেনেছি, শুনেছি, দেখেছি হোম কোয়ারান্টাইন, সেল্ফ আইসোলেশন, করোনা পজিটিভ, করোনা নিগেটিভ, ভেন্টিলেটর, হ্যান্ড স্যানিটেশন, স্যানেটাইজিং, ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোঁয়া, পিপিই………আরও কতকিছু!

আর সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষকে উপরের শব্দগুলো শুনতে, জানতে ও মানতে বাধ্য করেছে একটি অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অদৃশ্য ভয়ংকর এক অনুজীব যার নাম হচ্ছে ‘ কোভিড-১৯’রোগ বা করোনা ভাইরাস।’

প্রতিটি মুহূর্তে শুনতে হচ্ছে ঐ করোনা ভাইরাসের সর্বনাশা আগমনী বার্তা!!! হুংকার দিয়ে জানান দিয়েছে খবরদার! নো হ্যান্ডস্যাক, নো কোলাকুলি, নো গ্যাদারিং, মাস্ক, গ্লাভস ছাড়া নো চলাফেরা। দরকার হলে হেড শীল্ড, ক্যাপ, পিপিই পড়ে জরুরী কাজে বাইরে যাওয়া। আর জীবন জীবিকার তাগিদে,খাবার সংগ্রহের প্রয়োজনে তাই নিয়ে রীতিমত করোনা যুদ্ধে যেতে হয়েছে যোদ্ধার সাজে বা মহাশূন্যে গমনকারী নভোচারীর সাজে।

বিসর্জন দিতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মহা আনন্দের দিনক্ষণ, ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবসের জাকঁজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, বাংলা শুভ নববর্ষের আনন্দমুখর মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ প্রাণপ্রিয় বৈশাখী মেলা, বৌদ্ধদের বিজু উৎসব, বৌদ্ধ পূর্নিমা, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশেষ পূজা-পার্বন, মুসলমানদের অন্যতম কাংখিত পবিত্র শবেবরাতের রাতে মসজিদে অবস্থান করে নামাজ আদায়, বহু প্রত্যাশিত মাহে রমজানের লোভনীয় ইফতার, ইফতার পার্টি আর ইফতারী বিনিময়।

বাদ দিতে হয়েছে জীবন থেকে মসজিদ, মন্দির আর গীর্জায় যেয়ে উপাসনা করা, বর্জন করতে হয়েছে মেহনতী শ্রমিক-মজদুরদের অনেক কাংখিত ঐতিহাসিক মে দিবসের ঐতিহ্যবাহী বিজয় আনন্দ মিছিল-সমাবেশ।

শুধু তাই নয়, ২৩ মে ১৯৭৩ আর ১৭ মে ১৯৮১ এ দুটি দিন হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্নোজ্জল দুটি দিন। প্রথমটি হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১ বছর ৪ মাস ১২ দিনের মাথায় ” জুলিও কুরি’ শান্তি পুরস্কার ” লাভ। কারণ বঙ্গবন্ধুর সফল পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য ছিল ” সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এবং সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান।” আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ২৩ মে ১৯৭৩ তারিখে বিশ্ব শান্তি পরিষদ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও শান্তিতে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধুকে ” জুলিও কুরি’ শান্তি পদক “-এ ভূষিত করা হয়। যা ছিল একজন নবীন রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ও বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক কোন সম্মাননা লাভের বিরল সম্মান ও গর্বের বিষয়। সাড়ম্বরে মহা আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক দিনটিও উদযাপন করা সম্ভব হয়নি করোনা কারণে লকডাউনের জন্য।

দ্বিতীয় বিশেষ দিনটি হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বরণের ৬ বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর নিদারুণ বেদনা নিয়ে ১৭ মে ১৯৮১ তারিখে স্বদেশে ফিরে আসেন। সকল নেতা-কর্মীদের অনুরোধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজ কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পতাকা। শক্ত হাতে হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় জয় বাংলা নৌকার। সেদিন যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার হাল না ধরতেন তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা যে কি হতো তা ভাবা যায়না।

এরপরের দিনগুলো শুধু বিজয়ের ইতিহাস। স্বাধীনতা বিরোধী খুনী শাসক দলের রক্ত চক্ষু, জেল-জুলুম আর একাধিকবার প্রাণনাশের চেষ্টাকে উপেক্ষা করে ১৯৯৫ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৫ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করে এবং নৌকা ভরে জনগণের আস্থা আর বিশ্বাস নিয়ে ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বরণের সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ -২০০১ মেয়াদে ১ম বার ও পরবর্তীতে ২০০৯ -২০১৯ পর্যন্ত টানা ৩য় বার বিজয়ী হয়ে ৪র্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে ১৫ বছরেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে করেছেন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনর্মাণে “রূপকল্প ২০৪১” গ্রহণের মাধ্যমে সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা উন্নত এক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় সংকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে ” অদম্য এক বাংলাদেশ।” বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখে বিশ্ববাসী আজ স্তম্ভিত। একের পর এক সাফল্যের মুকুট ধরা দিয়েছে দেশ ও জাতির মাথায়। বিশ্বের সেরা ১০ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একজন শক্তিশালী ও সৎ আমাদের দক্ষ ও সুযোগ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ৩৯তম স্বদেশ প্রর্ত্যাবর্তন দিবসের ঐতিহাসিক দিনটির আনন্দঘন উদযাপনের সমস্ত আয়োজন বিসর্জন দেয়া হয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত হতে জনগণকে রক্ষার জন্য।

করোনা কারণে বাদ পড়ে গিয়েছে সিয়াম সাধনা শেষে ঈদুল ফিতরের আগে আবালবৃদ্ধবনিতার প্রিয় নূতন পোশাক কেনাকাটার অশেষ আনন্দ। আরও অসংখ্য কত কিছু বাদ দিতে হয়েছে জীবন থেকে যা ভাষায় অবর্ণনীয়!তাছাড়া কত মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে বাবা-মা, ভাই – বোন স্বামী স্ত্রী, আত্মীয়- স্বজন, বন্ধু -বান্ধবের কাছ হতে। আরও কত প্রাণ নিবে এই প্রাণঘাতি করোনা কে জানে….!!! যা এই পাতায় পাতায় লিখেও কোনদিন শেষ করা যাবে না।

আর সবশেষে অনেক প্রতীক্ষার পর ঈদগাহে যেয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্ববোধের হৃৃদয় ভরে কোলাকুলি…..ইত্যাদি কোন কিছুই এবার আর করা হয়নি শুধুমাত্র ঐ ‘কোভিড-১৯’রোগের জন্য।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত হতে বাঁচার জন্য দেশ, জাতি, আর পৃথিবীকে পরিণত হতে হয়েছে লকডাউনের শিকারে।
থাকতে হয়েছে দূরে দূরে, মাস্ক পড়ে, পিপিই পড়ে যুদ্ধের সাজে। গৃহবন্দী জীবনে থাকতে হয়েছে একাকী হয়ে টিভি, মোবাইলের পর্দায়, ফেসবুকের পাতায় আর ইন্টারনেটের জালে। কখনোবা বারান্দার গ্রীলে বন্দী হয়ে বন্দী পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকতে হয়েছে বিশাল আকাশের বুকে আনন্দে খেলা করা মুক্ত পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে।
ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে সুউচ্চ ভবনের গাড়ি রাখার বেজমেন্টে,ঘরে-বারান্দায়,বড়জোর কাছের মসজিদে। কেন জানি বিষাদে ভরা প্রাণহীন ঈদের উচ্ছ্বাস-আনন্দে কোলাকুলি বিহীন ঈদের নামাজ পড়ে আসার পর থেকেই মনটা বিষন্নতায় ভরে আছে।

ভারচুয়াল ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় আর ফেসবুকের পাতায় ভালো কাটেনি ঈদের দিনটি। টিভি চ্যানেল গুলোতে ছিল না কোন জমজমাট ঈদ আয়োজন, দেখতে ইচ্ছে করেনি কোন কিছু। শুধু আশংকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দেখতে হয়েছে ঈদের খুশীর দিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার সর্বশেষ বুলেটিনে রাক্ষসী করোনার আক্রমণে প্রাণহানি আর আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ডময় জয়জয়কার। এইতো হচ্ছে ২০ মার্চ ২০২০ হতে মে ২০২০ পর্যন্ত সময়ের করোনা আশংকায় কাটানো অদেখা- অচেনা অন্য রকম জীবনের চালচিত্র, যার খুব সামান্য কিছু বর্ণনা তুলে দিলাম এই লেখাটিতে।

প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে হঠাৎ করে করোনাময় ঈদ উদযাপন ও করোনার অবদানে নিজের পরিবর্তিত পোশাকে নিজেকে দেখে কিছু একটা লিখতে যেয়ে দেখি সীমাহীন কষ্টের শব্দ, বাক্য,অসংখ্য দুঃখ কষ্ট আর যন্ত্রণাময় ছবিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর তাই রাগ করে করোনার পোশাকে নিজের ও সমস্ত মানুষদের এই উদ্ভট ছবি,সঙ্গে আরো কিছু ছবি যা মনে ধরেছে তাই দিয়ে আজকের এই ‘করোনাকালের চালচিত্র’ শেষ করছি।

পৃথিবী থেকে করোনা দূর হয়ে আবার সমস্ত মানবজাতি আনন্দে মেতে উঠুক প্রাণে প্রাণে, হাসি-গানে। প্রতিটি মুহূর্ত আবার প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর হয়ে উঠুক মানুষের জীবন। সচল হয়ে উঠুক অর্থনীতির চাকা, শিল্প-কারখানার মেশিনগুলো, খাদ্য ফসলে ভরে উঠুক কৃষকের গোলা-ঘর। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভরে উঠুক ছাত্রছাত্রীদের উচ্ছল পদচারণায়। রাস্তাগুলো হয়ে উঠুক আগের সেই যানজটে পরিপূর্ণ। সমস্ত উৎসবগুলো হয়ে উঠুক আনন্দমুখর, কোলাহলপূর্ণ। আবার এগিয়ে চলুক উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা আগের সেই ‘ অদম্য এক বাংলাদেশ।’

আর তাই করুনাময় আল্লাহ তাআলার কাছে এখন একটাই প্রার্থনা, করোনা ভাইরাসের এই মহামারী হতে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

লেখকঃ কৃষিবিদ শেখ মোঃ মুজাহিদ নোমানী 
————————————————————————
 “বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত ” কৃষি সাংবাদিক, উদ্ভাবক, উপ-পরিচালক (অবঃপ্রাপ্ত), জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার, এসসিএ (কৃষি মন্ত্রণালয়) এবং
সিনিয়র সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Comments

comments