ঢাকারবিবার , ১৪ জুন ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমাদের রাজনীতিবিদ এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক কথা’

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুন ১৪, ২০২০ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। সব কথা একসাথে বলা যায়না। কিছু ইতিহাস আছে যা পড়লে গাঁয়ে লোম কাটা দিয়ে উঠে। চিরকালই মানুষ শান্তি খুঁজেছে, কিন্তু শান্তি তাদের ভালো লাগে নাই৷ কথায় আছে সুখে থাকলে ভূতে কিলায়! এই ভূত মনুষ্য জাতিকে খুব কিলিয়েছে বোধহয়, না হলে এই অবস্থা হবে কেন? আবার অন্ধ অনুকরণ মূল স্রোত থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে আমাদেরকে।

আমি জানিনা, সম্মোহন বলে কোনো জিনিস আদৌ আছে কি না৷ থেকেও থাকতে পারে নাহলে অপশক্তি এত অনুসরণকারী কোথায় পায়!!

ইতিহাস পড়ে জানতে পারি, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) কথা যিনি কিনা ন্যায়পরায়ণ এবং প্রভাবশালী খলিফা ছিলেন। তাঁর সময় চারদিকে ন্যায় বিচার এবং সাম্য ছিলো। তিনি নিজের পুত্রকেও ক্ষমা করেন নাই, দিয়েছেন দূর্রা মারার আদেশ। আবার সামান্য দিনমজুরের মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে এনে ছিলেন কারণ মেয়েটি ছিলো খুবই সৎ।বায়তুল মাল থেকে এক টাকাও বেহেসাবি খরচ করেন নাই, নিজেও একটাকা হারাম খান নাই। তবুও সেই হযরত উমর (রাঃ) কে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে আততায়ীর হাতে। তারপর খলিফা হযরত উসমান (রাঃ) ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক, উনাকেও শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিলো আততায়ীর হাতে। এমনকি উনার জানাজায় যৎ সামান্য লোকই উপস্থিত ছিলেন। এই যে দুইজন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে শহীদ হলেন আমরা কিন্তু একবারো উনাদের নামের আগে শহীদ বলছি না।অথচ আমরা দলীয় লোকদের নামের আগে যাচ্ছেতাই ভাবে শহীদ যোগ করে যাচ্ছি।একবারো কি এই সম্মোহন বিষয়টা নিয়ে নিজের মনের মধ্যে প্রশ্নের উদয় হয়না আমাদের?

আর সাহাবাদের নামের আগে আলাদা করে শহীদ বা আলহাজ্ব এসব বলার দরকারও নেই। কারণ মহান আল্লাহ  উত্তম ফয়সালাকারী। এসব বলে বেড়াবে কারা যারা নিজেদের নিয়ে সন্দিহান, তাদের অনুসারীরা নামের আগে এসব যোগ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলবে।

মানুষের সুখে থাকতে যদি ভালোই লাগতো তাহলে কিন্তু এই মহান দুইজন শাসককে আততায়ীর হাতে শাহাদাত বরণ করতে হতো না।

এবার আসি হাল আমলের আলোচনায়।আমরা সবাই গাদ্দাফির কথা জানি। যিনি ৪২ বছর লিবিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। তখন লিবিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থান ছিলো উর্ধমুখী। মানুষের জীবনমান ছিলো সচ্ছল এবং নিরাপদ। কিন্তু ওই যে মানুষকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। তাই তারা গাদ্দাফিকে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করে, যেই গাদ্দাফি সারাজীবন লিবিয়দের জন্য নিজেকে সদা জাগ্রত এবং ব্যস্ত রেখেছিলেন। এই হলো তার শেষ পরিণতি। আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে লিবিয়ায় বিরাজ করছে একসাথে তিন সরকার। জনগণের জীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। জানমালের কোনো নিরাপত্তা নাই। অগত্যা সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মানুষ মরছে হাজারে হাজার।জনগণ যে কোথায় কোন পালে কখন হাওয়া লাগায় বুঝা মুশকিল।

কানাডা সরকার তার জনগণের জন্য অন্তপ্রাণ, কিন্তু ফিলিস্তিন নীতিতে তারা ইজরায়েলকে সমর্থন করে। আবার পশ্চিমবঙ্গের মমতা রাজ্যসরকার, সেখানের সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য খুবই অন্তপ্রাণ কিন্তু তিনি তিস্তার ব্যাপারে আপোষহীন। বাংলাদেশ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাক তিনি কিন্তু পানি দিবেন না।উনার এক কথা। আবার রিসেপ তায়েপ এরদোগান তিনি সারাবিশ্বের মুসলিমদের জন্য দরদ দেখান। প্রতিদিন নির্যাতিত মুসলমামদের জন্য বিবৃতি দেন। হয়ে উঠতে চান মুসলিম বিশ্বের নেতা, কিন্তু কুর্দিদের ব্যাপারে একরোখা। হাজার হাজার কুর্দি নিহত হয়েছে এরদোগান বাহিনীর হাতে। ইরানের ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী এবং তাদের মিত্রদের হাতে হত্যার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার সুন্নী বেসামরিক লোক। আবার উসমানীয় খেলাফতের শেষ খলিফাকে নির্বাসিত করা হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে পড়ানো হয়না মহান সুলতান সালাউদ্দিন আয়্যুবি ইউসুফ, নুরুদ্দিন জঙ্গীর ইতিহাস বা অটোম্যান খলিফা ২য় মুহম্মদের কথা।কারণ অপশক্তির সম্মোহন ব্যপকভাবে গ্রাস করছে ব্যক্তির নীতি। প্রকৃতপক্ষে কে কতটুকু ভালো তা নির্ভর করছে শুধু একটা সময়ের উপর। এটাকে যদি সার্বিক হিসেব করতে চাই তাহলেই বাধে বিপত্তি।আবার নেপোলিয়ন বা জোয়ান অব আর্কের কত কথা আমরা সাহিত্যে দেখতে পাই অথচ উসমানীয় বাহিনীর হাতে নেপোলিয়ন কয়েকবার পরাজিত হয়েছিলেন এই ইতিহাস কোথাও নেই। যদি কোনো শাসক বা নেতা তার অনুসরণকারী তৈরি করতে না পারে বা অপশক্তির কাছে তার আর্দশ পরাজিত হয়, তাহলে ইতিহাসে তাঁর জায়গা হারিয়ে যায়। এটাই ধ্রুব সত্য। ভালো মানুষদের যেমন অনুসরণকারী আছে তেমনি শয়তানের অনুসরণকারী তাগুত বাহিনীও রয়েছে। যারা বিভিন্ন যায়গায় ফেতনা তৈরি করে কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ফলশ্রুতিতে সবকিছু নিয়ে উপহাস দেখতে পাই।

আজকে যদি চীন, রাশিয়ার দিকে খেয়াল করি দেখতে পাই ক্ষমতা পাকা করার কী কূট কৌশল! চীনা প্রেসিডেন্ট নিজেকে আমৃত্যু স্বীয় পদে বহাল থাকবেন সেটি কিন্তু তিনি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন, একই ভাবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা পাকা করতে বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এরা কিন্তু তোয়াক্কা করছেনা সাধারাণ মানুষের মতামতকে। তবুও এদের আমি সফল শাসক বলব।কেননা, ভঙ্গুর সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আজকের রাশিয়া, পুতিনের অবদান অনস্বীকার্য। তেমনিভাবে বলা যায় চীনাদের উত্থানের ব্যাপারটা। রাজনীতির ম্যাকিয়াভ্যালি থিওরি যারা না জানেন তাদের মনে হতে পারে এসব বিষয় মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু এটি মোটেও তেমন নয়…..

প্রত্যেকটা রাজনীতিবিদ, হোক সেটা জাতীয় রাজনীতি, হোক সেটা আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সবাই তার নিজস্ব রীতিনীতি ধারণ করেন। মানুষের কল্যাণ করার ইচ্ছে থেকেই মানুষ রাজনীতি করে। প্রত্যেকটা কাজ সবার জন্য সমান ভালো হয়না। তাই অনেক মানুষ থাকেন যারা নেতাদের পছন্দ করেন। অনেক মানুষ থাকে যারা ঘৃণা করে। ভালোবাসা আর ঘৃণা ব্যাপারটা আপেক্ষিক।

শেষ করছি একটা ব্যক্তিগত আলাপ চারিতা দিয়ে, অনেকদিন আগের ঘটনা ৫/৬ বছর হবে হয়তো। তখন প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বেঁচে আছেন। উনার সাথে সিলেট সার্কিট হাউসের একটা রুমে ঘরোয়া টাইপের একটা আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিলো আমার। তখন মিডিয়ায় উনাকে নিয়ে ব্যপক মাতামাতি। কারণ এর কয়েকদিন আগে উনি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে সিগারেট খেয়েছিলেন।যার ফলে ব্যপক সমালোচনার জন্ম হয়। উনাকে কেউ একজন এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল আমাদের আলোচনায়।তখন উনি বলেছেন, “আজকে অনেক মানুষ আমাকে ঘৃণা করে, আমাকে নিয়ে সমালোচনা করে। আমি মহসিন আলী এমনি এমনি মন্ত্রী হই নাই।সামান্য জেলা ছাত্রলীগের কর্মি থেকে আজ পূর্ণ মন্ত্রী, আল্লাহর রহমত না থাকলে সম্ভব হতোনা। আমি কত নিজের কাধে করে খাবার নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি।কতজনের চিকিৎসার টাকা, পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে দিয়েছি তার হিসেব নাই। তোমরা যদি ১০০ জন আমাকে ঘৃণা করো মনে রাখবে ১০০০ জন আমার জন্য দোয়া করে। ঘৃণার চেয়ে দোয়ার সংখ্যা বেশি তাই আমি আজ মন্ত্রী।”

আসলে যারা কোনোদিন রাজনীতির সংস্পর্শে যান নাই তারা রাজনীতিবিদদের ভেতরটা জানেননা, জানেননা মানুষের বিপদে আপদে তারা কতটুকু সহানুভূতিশীল। প্রত্যেকটা রাজনীতিবিদ মানুষের জন্য কতটা অন্তপ্রাণ, যারা কাছ থেকে দেখেছে শুধু তারাই জানেন। যদি ভেতরটা মানুষ জানতো তাহলে আততায়ী বা ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হতোনা বিশ্ব নেতাদের, জাতীয় নেতাদের।গাদ্দাফির মতো মানুষকে মরে পড়ে থাকতে হতো না রাস্তায়!! আল্লাহ আমাদের মাফ করুক, আমিন।

খালেদ সাইফুল্লাহ ইলিয়াছ

কবি ও সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। 

Comments

comments