ঢাকারবিবার , ২১ জুন ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চাকুরিতে প্রবেশের সময় বাড়ানো হোক

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুন ২১, ২০২০ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মানুষের বাঁচার জন্য টাকা চাই। জীবনের সকাল থেকে সন্ধ্যা টাকা উপার্জনের পেছনেই চলে যায়। আমাদের পড়ালেখা; যেটাকে অনেকে জ্ঞান চর্চা কিংবা গবেষণার মাধ্যম হিসেবে ধরেন সেটা নিখাদ টাকা বানানোর প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজরা এদেশের মানুষের রক্তে কেরানিগিরি করার যে নেশা ঢুকিয়ে দিয়েছিল সেই নেশায় এখনো বুদ হয়ে আছে তরুণেরা। ইংরেজরা চলে গিয়েছে,ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে অন্য দেশ হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছে এরকম আরো পরিবর্তন হয়েছে। জনসংখ্যা থেকে মাথাপিছু আয়, আমাদের চিন্তা-চেতনা অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে।

এই দেশকে শাসনের লক্ষ্যে ইংরেজরা এদেশের মানুষকে শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। একটু কাজ চালানো ইংরেজি, একটু কাজ চালানো অঙ্ক, একটু ভূগোল, একটু বিজ্ঞান এইতো হয়ে গেল পুরো দুস্তুর কেরানি। সেই সুযোগে বাঙালিরা পড়ালেখায় এগিয়ে গেল। তারা বিলেত ঘুরে আসলো, ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে চাকরি পেল। তারপর বহু বছর পর ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলো। তারও কিছু বছর পর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান আলাদা হলো। পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ আর পশ্চিম পাকিস্তানের নাম পাকিস্তান হলো।

ইংরেজরা ভারতীয়দের মধ্যে আইসিএস’র প্রচলন করলেও স্বাধীন বাংলাদেশে সেটা বিসিএস নামে আবির্ভূত হয়। সরকার কর্তৃক প্রদান করা বিভিন্ন চমকপ্রদ সুযোগ-সুবিধায় বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের দৃষ্টি আটকে যায়। তাদের দৃষ্টি বিসিএসের উপরে আর উঠে না। একটা সরকারি চাকরি যেন একটা নিশ্চিত জীবন। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন উচ্চ জায়গায় আসীন হওয়া এবং জনগণের সেবা দেয়ার চিন্তা করা অতি উচ্চ বিচার কিন্তু বিসিএসের এই ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় প্রায় পুরো তরুণ-তরুণীর দৃষ্টি নিবন্ধ; সেটাই বিপত্তি। প্রতি বছর শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা চাকুরিপার্থী বের হচ্ছে কিন্তু সেই অর্থে উদ্যোক্তা বের হচ্ছে না।

সরকার সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বেঁধে দিয়েছে। অনেকের এই বছরই হয়তো আবেদনের শেষ সুযোগ। অনেকদিন ধরেই চাকুরিতে প্রবেশের নির্ধারিত বয়সটাকে বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। হঠাৎ করেই হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব না। ধীরে ধীরে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আগামীর উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে।

করোনা ভাইরাসের দরুন সরকারকে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হয়েছিল কিন্তু বিশ্বব্যাংক এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে প্রবৃদ্ধি কমে ২-৩ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে এই মহামারি যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তাহলে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হবে যা বাংলাদেশে -৫.২ পর্যন্ত হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের হিসেবে সাধারণ ছুটির একমাসে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১ লাখ ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা। যা দৈনিক কমপক্ষে ৩৩০০ কোটি টাকা।

লকডাউন সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাই অনেক জায়গায় চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাঁটাই না করে কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলোকে খুব কম টাকায় সংসার চালাতে হচ্ছে যেটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচারের সামিল।

এই সময়ে অনেকে চাকুরি হারিয়েছে আবার অনেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর চাকুরি খুঁজতে বের হবার চিন্তা করছে। কিন্তু লকডাউনের সময় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যেখানে শ্রমিক ছাঁটাই কিংবা কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেয়ার কথা চলছে সেখানে নতুন নিয়োগের আশা করা’ই বোকামি। এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে আমাদের আরো বেশি সময় লাগতে পারে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে সেশন জটের ঝুঁকিতে এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা হতেও বিলম্বিত হচ্ছে। হঠাৎ বয়ে যাওয়া বাতাস থেমে গেলে যেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় সেরকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আবার বাংলদেশের মানুষের বাইরের দেশে চাকুরির খুঁজে যাওয়ার যে প্রবনতা রয়েছে সেখানেও ভীতিজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আদম ব্যবসায়িরা টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও আদৌ তারা পারছে না। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় বলেছে, এবারের বাজেটে অর্থনীতির চেয়ে মানুষের দিকে নজর দেয়া হয়েছে বেশি। মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যেখানে ৬ শতাংশ ঘাটতির কথা বলা হয়েছে (চলতি বছরের তুলনায় যা ১ শতাংশ বেশি) । করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সামাজিক অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে সাহায্য করতে হবে সরকারকে। শ্রমিক ছাঁটাই যেন নাহয় সেজন্য রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য ২% সুদে ঋণ দেয়া হয়েছে।

সবকিছুর সাথে তরুণদের চাকরির দিকও দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সেশন জট, এইচএসসি পরীক্ষা বিলম্বে অনুষ্ঠিত হওয়াসহ শিক্ষাঙ্গনে যে নিস্তব্ধতা রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুদিন লাগবে। ততদিনে চাকুরিপ্রার্থীদের চাকুরির বয়স কিছুটা গুচে যাবে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে দেশের ১ কোটি ৩ লাখ নাগরিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে, অস্থায়ী কিংবা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সাথে নিয়োজিত নাগরিকেরা এই ঝুঁকিতে পড়েছেন। এই সংখ্যাটা আরো বাড়বে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। করোনার পরবর্তীতে অনেকের বয়স চলে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও করোনার জলদি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই, অদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তরুণদের চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হোক।

ইকবাল হাসান
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

comments