ঢাকাসোমবার , ১৩ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিলুপ্তির পথে চড়ুই পাখিঃ ভারসাম্যহীন হবে পরিবেশ

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ১৩, ২০২০ ১:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

চড়ুই একটি চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। এরা মানুষের আশপাশে বসবাস করতে ভালোবাসে। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চড়ুই মানুষের সান্নিধ্যে আসে। পৃথিবীতে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়ুই দেখতে পাওয়া যায়। জীববিজ্ঞান অনুযায়ী এদের পরিবার ১১টি গণে বিভক্ত। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এদের কিচিরমিচির গান চারপাশকে জাগিয়ে তোলে। ভাবতে অবাক লাগে- গায়ক চড়ুইরাই ৯০টি সুরে গান গাইতে পারে! আমাদের ঘরবাড়ি, আশপাশের ভাঙা দালান এবং বড় ও বুড়ো গাছের গর্তে এরা বাসা বাঁধে। চড়ুই বছরে একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবারে ৪ থেকে ৬টি করে ডিম দেয়। এদের ছানা বেঁচে থাকে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। শুধু মেরু অঞ্চল ও এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই চড়ুইয়ের দেখা মেলে।

গত কয়েক দশকে অর্থাৎ নব্বইয়ের দশক থেকে চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮০ সাল নাগাদ পৃথিবীর বৃহদাংশজুড়ে হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। শুধু লন্ডন শহরেই ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে সংখ্যা হ্রাসের হার ৭০ ভাগ। যদিও ১৯২০ সাল থেকেই এ হ্রাসের আভাস পাওয়া যায় তবে ইদানীং মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের কারণে এদের হ্রাসের হার অত্যন্ত ঊর্ধ্বগতি।

চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হল- নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষক যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহার করে। আর চড়ুই প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বিচির পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে। কিন্তু ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে এসব খাবার খেয়ে তারা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, গ্রামের দিকে চড়ুইয়ের দেখা মিললেও শহরাঞ্চলে সে দৃশ্য প্রায় বিরল। এর জন্য প্রকৃতভাবেই দায়ী ক্রমবর্ধমান মোবাইল টাওয়ার। টাওয়ার থেকে নির্গত ক্রমাগত বিকিরণের জেরেই দ্রুতহারে কমে যাচ্ছে এই পাখিটি।

চড়ুইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল- এদের নিয়ে ব্যবসা করা। অনেক পশ্চিমা দেশে চড়ুই দিয়ে তৈরি হয় সৌখিন খাবার sparrow pie এমনও দেখা গেছে যে, এই খাবার তৈরির জন্য অসংখ্য চড়ুইয়ের প্রয়োজনে একবার ১২,৬৩০০০ হিমায়িত চড়ুইয়ের চালান ধরা পড়ে। এছাড়া ধূমায়িত চড়ুই খাবার হিসেবে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর সুপার মার্কেটে বিক্রি হতে দেখা যায়। আবার পৃথিবীর অনেক দেশের চিড়িয়াখানায় শিকারি পাখিদের খাবার হিসেবে চড়ুই ধরার চল ছিল। কয়েক দশক আগেও ঢাকা শহরে বাড়ির উঠান, ঘরের কোণে, বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক। চড়ুইয়ের ডাকে শুরু হতো সকাল। আর সন্ধ্যায় চড়ুইয়ের ডাকে আমরা বুঝতাম মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে। ঘরের ভেন্টিলেটারে চড়ুই দম্পতির সংসারটায় সদ্য জন্ম নেয়া চড়ুই আমাদের পরিবারের অংশই ছিল। এসব খুব বেশিদিন আগের নয়। গেল দুই দশক আগের গল্প।

আমাদের দেশে মাত্র দুই প্রজাতির চড়ুই পাখি দেখা যায়। একটি পাতি চড়ুই ও অন্যটি গেছো চড়ুই। তার মধ্যে গেছো চড়ুই একটি বিরল পাখি। সচরাচর এই পাখির ঝাঁক চোখে পড়ে না আগের মতো। অঞ্চল ভেদে একে আবার বাউই পাখি বলেও চেনে। দিন দিন এই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পাখির মাংস খুব সুস্বাদু বলে অনেক পাখি শিকারি পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে থাকে। খোলা মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে এই চড়ুই পাখির দল আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। আর পাতি চড়ুই আমাদের গ্রাম বাংলার ঘর-বাড়ি ও শহরের ইমারতের গর্তে অতি সহজে চোখে পড়ে। এরা সাধারণত শহরের ইমরাতের গর্তেই বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে। গৃহে বসবাসকারী পাতি চড়ুই খুবই মানুষ ঘেঁষা। কিন্তু এরা অনেকটা চালাক এবং মানুষের কাছ থেকে একটু দূরে থাকতে চায়। কাছে গেলেই ঝোপালো গাছের পাতি ডালে চলে যায়। বিশেষ করে ধারে কাছে যদি বরই গাছ থাকে। দলের একটি উড়াল দিলে বাকিগুলোও একে একে উড়ে যায়। পথচারীদের ফেলে দেওয়া চীনা বাদামের দানা খেতে পিচঢালা সড়কেও নামে। ঘাসের মধ্যেও পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। জোড়া পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রামের মাঠের কাছে ঝোপ-জঙ্গলে নদীর ধারে গ্রামের ঘরের চালের ওপরে দল বেঁধে থাকে। সব সময় একই সুরে ডাকে। ঝোপালো গাছে, ঘরের চালের ভিতর বাসা করে সাধারণত মার্চ থেকে আগস্ট এই ছয় মাসে ছয়টি ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন। বাচ্চারা উড়তে শিখলে বড়দের সঙ্গে তারা মাঠে যায় খাবার খেতে। এ পাখি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে রয়েছে।

এই পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। খাবারের তালিকায় রয়েছে শস্যদানা, ফল, কচি ঘাসের ডগা, বীজ, ছোট কীটপতঙ্গ ও ফুলের কুঁড়ি।

কলম ২৪ ডেস্ক

ছবি: তৃষ্ণা আকন্দ

Comments

comments