কিশোরগঞ্জে পরিবহন মালিকদের এমন একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে যারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এ সেক্টরে অনিয়মও বাড়ছে। রাজনৈতিক নেতারা পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় এ খাতে নিয়মনীতি কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের নেপথ্যে রাজনৈতিক মালিকানার এই অশুভ প্রভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার দলীয় নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা পরিবহনগুলোর কারণে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল রুটের পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। মানা হচ্ছে না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়মনীতি। যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, রুট নির্ধারণ, সার্ভিসে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানিরও অন্যতম কারণ পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার সম্মিলিত তৎপরতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। প্রতি মাসে মোবাইল কোর্ট বসানোর কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা হয় ঢিলেঢালা। নাম মাত্র মোবাইল কোর্ট। অজানা কারণে নিরব প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মালিকানাধীন বাস কোম্পানিগুলোই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। উপজেলার সড়ক পরিবহনেও তাদের তান্ডব। রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতায় মিলছে যানবাহনের সহজ রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিট। বিভিন্ন রুটে আধিপত্য বিস্তারের কাজ তারাই করছেন। এছাড়াও শত শত ভাঙাচোরা বাস এখনো চলছে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল রুটে। এসব বাসকে অনেক যাত্রী মান্দাতা আমলের ‘মুড়ির টিন’ বলে থাকেন। বসতে গেলে হাঁটু নিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। পরিবহনের এসব বাস সব রুটেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলে। এসব গাড়ির চালকরাও বেপরোয়া। কোনো যাত্রী হাত তুললেই যেখানে সেখানে স্টপিজ। সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়েও যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায়। অনিয়ম রুখতে না পারলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও বাজে হবে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল। সাধারণ যাত্রীরা এ থেকে পরিত্রান চায়।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে চারশো বাস ও মিনিবাস কিশোরগঞ্জের সকল রুটে চলাচল করে। প্রতিটি রুটেই দেখা যায় যাত্রীদের এই ভোগান্তির চিত্র। এমনকি অনিয়মের কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
কিশোরগঞ্জ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক শেখ সেলিম কবীর বলেন, জেলার পরিবহন খাত সম্পর্কে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুদৃষ্টি, প্রশাসনের যথাযথ নজরদারী সর্বোপরি পরিবহনের দুর্বল নেতৃত্ব ও অধিক মুনাফার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে এর থেকে সহসাই মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না।
এ বিষয়ে কথা বলতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগে কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য সচিব শেখ ফরিদের মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে বন্ধ পান এ প্রতিবেদক।
Comments
comments