ঢাকাসোমবার , ১৩ জুলাই ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একটি বর্ষা, অন্যটি শুকনো

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুলাই ১৩, ২০২০ ১২:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হাওর। অপূর্ব সুন্দর এক জনপদ। শুকনো মৌসুমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ধূলো উড়া মেঠোপথ, রুপালি নদী। আর বর্ষায়? এই রুপালি নদীগুলোই ফুঁসে উঠে। দুই তীর ছাপিয়ে প্লাবিত করে ফসলি মাঠ। দেখতে একেবারে সাগরের মতো। ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওরের সৌন্দর্য অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু ভিন্ন। ব্যতিক্রম এখানকার ঋতু’বৈচিত্র্য।

হাওরে বর্ষা থাকে বছরের প্রায় ছয় মাস। পানি আসতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে। শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। বাকি কয় মাস এখানে শুকনো সময়। সে হিসেবে মূলত হাওরে ঋতু দুটি। একটি বর্ষা, অন্যটি শুকনো।

কথিত আছে, বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি বড় অংশ এক সময় ‘কালীদহ সাগর’ নামে বিশাল জলরাশিতে নিমজ্জিত ছিল। পরবর্তীতে ভূ-প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে তা পিরিচ আকৃতির নিম্ন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়, এই নিম্ন সমতল ভূমিই এখন হাওর। হাওর শব্দটিও সাগর শব্দের অপভ্রংশ। সাগর থেকে সায়র, সায়র থেকে হাওর। কি শুকনো কি বর্ষাকাল।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সৌন্দর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে থাকে এই হাওর। বর্ষায় হাওর হয়ে ওঠে কূলহীন সাগর। বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর একেকটাকে ছোট দ্বীপের মতো লাগে। দূর থেকে মনে হয়, কচুরিপানা হয়ে যেন পানিতে ভাসছে গ্রামগুলো। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি মন কাড়ে যে কারো। পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন, হাঁসের ডিমের মতো সাদা ফল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বরুন গাছ, কিংবা গাঙ্গেয় মিঠা পানিতে শুশুকের লাফ-ঝাঁপ দেখলে বিনোদিত না হয়ে পারা যায় না।

রাতে হাওরের মাঝখানে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেরা যখন জাল দিয়ে মাছ ধরে, এ দৃশ্য দূর থেকে দেখলে মনে হয় কারা যেন শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। রাতভর হাওরে ভেসে ভেসে জোসনা উপভোগ করাটা আনন্দের বিষয়। অভিলাষী মনকে জোসনায় ঠাঁই দেওয়ার এমন সুযোগ হাওর ছাড়া আর কোথায় আছে! যোজন হাওরে ট্রলারে’র ছাদে বসে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখাটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার বটে। এখানে হিজল করচের মাথা ছুঁয়ে সূর্য যখন ডুবে, দিগন্ত জুড়ে হাওরের পানি লালে লাল হয়ে যায়। সূর্যের লাল-সোনালি-হলুদ আলো লেজার রশ্মির মতো রেখা ছড়িয়ে দেয় পুরো আকাশ’জুড়ে। এ এক অপূর্ব দৃশ্য!

মাঝে-মাঝে হাওরের প্রকৃতি অবশ্য ভয়াবহ রূপ নেয়। বাতাস ছুটলে হাওরের পানিতে ঢেউ ওঠে প্রচ-। এসময় চলাচলকারী নৌকাগুলোকে তীরে এসে আশ্রয় নিতে হয়। না হয় হিজল গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। বাতাস দীর্ঘস্থায়ী হলে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে গ্রামগুলোর ওপর। এ সময় বাড়িঘর ভাঙতে থাকে। হাওরের লোকেরা এ দুর্যোগ’কে বলে ‘আফাল’। এই ‘আফাল’ থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হয় হাওরবাসীকে। ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ, কচুরিপানা ও বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বাড়ির চারপাশে নির্মাণ করতে হয় শক্ত বাঁধ। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলে ‘ঘায়েল’। রাত জেগেও ‘ঘায়েল’ পাহারা দেয় গ্রামবাসী। এখন অনেক গ্রামেই সরকারিভাবে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

বর্ষা পরবর্তী শরতে হাওরে যখন পানি কমা শুরু হয় তখন থেকেই আকাশে সাদা মেঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাজার হাজার ধবল বকেরও উড়াউড়ি শুরু হয়। দুলতে থাকে হাওর পাড়ের সাদা কাশবন। আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিলে ফুটে সাদা শাপলা, রক্ত শাপলা, নীল শাপলা ও চাঁদমালা ফুলেরা!

এরপর শুকনো মৌসুমে পুরো হাওর হয়ে যায় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর। যেখানেই চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। একটু দূর যাওয়ার পরপরই চোখে পড়ে বিভিন্ন আকৃতির বিল-ডোবা। এসবে জলজ উদ্ভিদের ঘন বুনট। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হোগলা বন। শলাগাছ, কলমিলতা। কোথাও কোথাও ছোট ভিটি আকারের উঁচু মতো জায়গা। ছন ক্ষেত। গলাডোবা ধান। এ সবই আকৃষ্ট করার মতো। ধানবনে কোড়া পাখির ‘টুব টুব’ ডাক নস্টালজিক করে যে কাউকে। বিলের কিনার ঘেঁষে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক। বালিহাঁসের ওড়াউড়ি।

কালিম, জলপিপি, ডাহুক, পানকৌড়ি ও জলময়ূরের অবগাহন দেখলে মোহিত না হয়ে পারা যায় না। এ সময়টায় পরিযায়ী পাখির আগমন হাওরকে আরো আন্দোলিত করে তুলে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মতো পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কলকাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব। এমন বিচিত্র প্রকৃতি ও জীবন’ধারা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না।

চীনের বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন সাং থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত পর্যটকরা হাওরের প্রকৃতি, প্রাচীন স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। মুগ্ধ হয়েছেন হাওরের মানুষের জীবনযাপন, কৃষ্টি-কালচার ও উদার আথিতেয়তায়। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেন মজিনা হাওর দেখে বিমোহি’ত হয়ে একে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এলাকা হিসেবে মন্তব্য করেন।

 

ছবিঃ সংগ্রহীত

Comments

comments