২২ অক্টোবর থেকে সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন করবেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। আর এই পূজার জন্য প্রতিমা তৈরিকে ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের প্রতিমা শিল্পীরা। তবে পৃষ্ঠপোষকতা’র অভাবসহ নানা সংকটে এখানকার প্রতিমা শিল্পীদের চরম দুর্দিন চলছে।
বেশ কয়েকজন প্রতিমা শিল্পীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা’য় চাহিদা অনুযায়ী এখন প্রতিমা তৈরি করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। এছাড়াও স্বরস্বতী পূজা, কালীপূজা, লক্ষী পূজাতেও তাদের ব্যস্ততা থাকে। তবে পূজাকেন্দ্রীক এই সময়গুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে তাদের কোন কাজ থাকে না। ফলে ওই সময়টাতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
সরেজমিন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সতাল, বত্রিশ এবং কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা ধূলদিয়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় এক সময় অসংখ্য প্রতিমা শিল্পীর বাসস্থান ছিল..। এসব এলাকায় ঘুরতে আসা মানুষ প্রতিমা শিল্প দেখে পুলকিত হতেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে সেই সুদিন আর নেই প্রতিমা শিল্পে’র।
কিশোরগঞ্জে এ বছর মোট ৩৬৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার ১৩টি উপজেলায় ০৮টি ব্যক্তিগত’সহ ৩৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫৩টি, করিমগঞ্জ উপজেলায় ১০টি, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ১৩টি, হোসেনপুর উপজেলায় ১৬টি, কটিয়াদীতে উপজেলায় ৩২টি, বাজিতপুর উপজেলায় ৬০টি, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩২টি, ভৈরব উপজেলায় ২১টি, ইটনা উপজেলায় ৩৫টি, মিঠামইন উপজেলায় ১৭টি, অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৫০টি, নিকলী উপজেলায় ১৩টি, তাড়াইল উপজেলায় ১৫টি পূজা মন্ডবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। একেকজন কারিগর’কে তিন থেকে পাঁচটি প্রতিমা তৈরির কাজ করতে হচ্ছে।
প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন, একটি প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমা তৈরির জন্য লাগে মাটি, খড়, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের তুষ ও কয়েক ধরণের রঙ কিনতে তাদের এই টাকা খরচ হয়। একেকটি প্রতিমা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়..।
কিশোরগঞ্জ শহরের সতাল এলাকার ভজন পাল, বত্রিশ এলাকার গনেশ পাল এবং কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা ধূলদিয়া গ্রামের প্রতিমা শিল্পী নারায়ণ পাল জানান, শুধুমাত্র পূজার সময়গুলো’তে আমরা কাজ করি আর বছরের বাকি সময় বসে থাকতে হয়। এছাড়া অনেক নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় মাটি পাওয়া যায় না। মাটির অভাব ছাড়াও প্রতিমা গড়ার জন্য অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, মূলধনের অভাবে কারণে তারা লাভের মুখ দেখতে পারেন না। এছাড়া এক্ষেত্রে কোন পৃষ্ঠপোষকতাও নেই। তাই দিন দিন বাপ-দাদার এই পেশা পরিবর্তন করে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের কালীবাড়ী মন্দিরের সাবেক সহ-সম্পাদক সত্যজিত সরকার অপু বলেন, আমরা সনাতন ধর্মালম্বীরা দুর্গা মা’র আরাধনা করি। দুর্গা মা আমাদের আরাধনায় তুষ্ট হলে আমাদের জীবন যাত্রায় সুফল বয়ে আনে। প্রতি বছর আমাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো’র সময় প্রতিমা শিল্পীরা মন্দিরের জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রতিমা তৈরি এবং তা বিক্রি করেন। এবছরও তারা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন বলেন, প্রতিমা শিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিল্প। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। প্রতিমা শিল্পীদের মূলধনের ঘাটতিসহ নানা সংকট থাকার কারণে অনেকেই এ শিল্প হতে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সারা বছর যেন তারা কাজটা করতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিমা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে এ শিল্পের বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব পূজা মন্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ডপগুলোতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন গোয়েন্দারা। মন্ডপ এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ যেন কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য সর্বদা তৎপর থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জানান, শান্তিপূর্নভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি মন্ডপ এলাকায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। আয়োজকদের পাশাপাশি পুলিশের বাড়তি নজরদারী থাকবে।
Comments
comments