কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মনি আক্তার (১৪) নামের এক কিশোরী গৃহকর্মীকে ঢাকায় বেলন দিয়ে পিটিয়ে ও খুন্তি গরম করে শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গায়ে দগদগে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। বেশ কয়েকদিন ধরেই তাকে এমন অত্যাচার-নির্যাতন করা হয় বলে জানায় ওই ভুক্তভোগী কিশোরী। সে পাকুন্দিয়া উপেজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামের আব্দুল মোতালিবের মেয়ে।
গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মনি আক্তার ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাযায়।
মনি আক্তার বলেন, ‘বাড়ি পাশের মরিয়ম নামের এক নারীর মাধ্যমে ঢাকার আজমপুর এলাকার রয়েল মিয়া ও জবা দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যায়। কিছুদিন যেতেই গৃহকর্ত্রী জবা কারণে-অকারণে শারীরিক নির্যাতন করতো ৷ গত ১৫-২০ দিন ধরে আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় গৃহকর্ত্রী জবা। কথায় কথায় গরম খুন্তি দিয়ে শরীরে ছ্যাঁকা দিতো ৷ লাঠি দিয়ে হাতে-পায়ে বেদম পেটাতো৷ দাঁড়িয়ে লাথি দিতো। খাবারের জন্য ভাত দিতো না। দিলেও ৩-৪ দিনের পচাঁ ভাত দিতো। না খেতে পারলে বলতো ‘খেতে হবে না’। ভাত রান্না করে সেটার ফেন দিতো-লবন ছাড়া খাওয়ার জন্য। পানি খেয়েও অনেক দিন থেকেছি। ঘুমানোর জন্য বাথরুমের সামনে যায়গা দিতো। এমন করতে করতে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাই।’
মা নিলুফা খাতুন জানান, অভাব-অনটনের কারণে মেয়ের সুখের আশায় তাঁর (জবার) বাসায় দিয়েছিলাম। মেয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমাকে খবর দেয়। ঢাকায় আজমপুর নামার পর এক লোক সিএনজি দিয়ে আমাকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আমার মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আর বাসা খুজিনি। মেয়েকে নিয়ে চলে এসে পাকুন্দিয়া হাসপাতালে ভর্তি করি।
এ সময় নিলুফা খাতুন কেঁদে কেঁদে বলেন,‘আমার মেয়ে জীবন প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। মারা গেলে মেয়ে শেষ, বেঁচে থাকলেও সারাজীবন ক্ষতের দাগ নিয়ে বাঁচতে হবে। আমি এই নির্যাতনের এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, মনি আক্তারের শরীরে পুরাতন-নতুন অনেক আঘাতের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।
অভিযুক্ত জবার ও তার পরিবারের পরিচয় জানার জন্য মনিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া তারই পরিচিত মরিয়ম আক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
পাকুন্দিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম শ্যামল মিয়া মুঠোফোনে জানান, যে থানা এরিয়ায় নির্যাতনের ঘটনা সেই থানায় অভিযোগ দিতে হবে। পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নির্যাতিত পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।
Comments
comments