টুইট করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের বর্তমান প্রধান ক্রিস্টোফার মিলার শিগগিরই এসপারের জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন।
মার্ক এসপারকে বরখাস্তের পরপরই মিলারকে প্রতিরক্ষা সদর দফতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আগস্টে কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে মিলার স্পেশাল ফোর্সের সাবেক সৈন্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে কাজ করেছেন।
তবে মার্ক এসপার ইতোমধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন যেখানে গত ১৮ মাসের দায়িত্ব পালনকালে পেন্টাগনের অর্জনের জন্য তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি সংবিধান অনুযায়ী দেশ সেবা করেছি এবং সে কারণেই আমি আমাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি। তবে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলসি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় স্বীকার করে নেননি বরং আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেছেন, জো বাইডেন এখন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট। তার মানে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ আর মাস দুয়েকের মতো। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বাইডেন-রাজ। তাতে কী আসে যায়। ট্রাম্প হলেন প্রচলিত ধারার বাইরের রাজনীতিক। তাই তিনি এই সময়েও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে এসপারের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। চলতি বছরের শুরুতে বর্ণবাদ বিরোধী প্রতিবাদে সেনা মোতায়েন নিয়ে হোয়াইট হাউজের সাথে বিরোধে জড়ান মার্ক এসপার। মিনেসোটায় পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডের মারা যাওয়ার পর গড়ে ওঠা আন্দোলনের সময় বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তা নিয়েই ট্রাম্প ও এসপারের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। গত জুন মাসে সাবেক সেনা অফিসার এসপার জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা উচিত নয়। এর ফলে বেজায় চটে যান ট্রাম্প। এ মত বিরোধের জের ধরে মার্ক এসপারকে বরখাস্ত করা হতে পারে ধারণা গড়ে ওঠেছিলো।
কিন্তু ঘটনা হলো, সে সময় ট্রাম্প এই ব্যবস্থা নেননি। নিলেন, যখন তিনি বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন। ট্রাম্প অবশ্য এসপারকে বরখাস্তের কোনো কারণ দেখাননি। এ ছাড়া ন্যাটো নিয়েও ট্রাম্পের মতের বিরোধী ছিলেন এসপার। মিলিটারি টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সম্পর্ক ভালো নয়, তা সত্ত্বেও তিনি পদত্যাগ করা ঠিক বলে মনে করেননি। তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট নিজের মতামত নিয়ে খুবই পরিষ্কার। আর তিনিও কাউকে খুশি করতে চাইছেন না। এসপার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইয়েস ম্যান নন। অবশ্য আগে একটা ধারণা ছিল যে, তিনি ট্রাম্পের খুবই বাধ্য।
ট্রাম্প অবশ্য তাঁর প্রায় চার বছরের কার্যকালে প্রচুর পরামর্শদাতা, কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন। তিনি অধিকাংশ সময় টুইট করে তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তবে আগে তিনি কী করেছেন আর এখন কী করছেন, তার মধ্যে ফারাক আছে। কারণ, এখন বাইডেন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হয়ে গেছেন বলে সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে। ট্রাম্প অবশ্য এই ফল মানছেন না। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। এখনও যে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিকে বরখাস্ত করছেন, তা থেকে স্পষ্ট, ট্রাম্প দেখাতে চাইছেন, তিনি ফলাফল নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। তিনি এখনো মনে করেন, শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবেন।
এসপারের আগে যিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই জেমস ম্যাটিস দায়িত্ব ছেড়েছিলেন সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধের জন্য। বরখাস্ত হওয়ার পর এসপার জানিয়েছেন, তিনি সংবিধান অনুসারে কাজ করেছেন। এখন তিনি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি, এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিডব্লিউ
Comments
comments