ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩ ডিসেম্বর ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. দেশজুড়ে
  3. পজিটিভ বাংলাদেশ
  4. ফটো গ্যালারি
  5. ফিচার
  6. ভিডিও গ্যালারি
  7. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকায় আতাতুর্কের ভাস্কর্য করবে তুরস্ক

প্রতিবেদক
Kolom 24
ডিসেম্বর ৩, ২০২০ ৭:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এবং ঢাকায় এভিনিউয়ে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তের কথা জানান তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান। এমন খবরের মধ্য দিয়ে ভাস্কর্য বিষয়ক ভ্রান্তির অবসান ঘটল বলে মনে করছে প্রগতিশীল সমাজ। তবে এখানেও ষড়যন্ত্র খুঁজছেন ইসলামি দলগুলো। আগামী শনিবার তারা ঢাকায় শীর্ষ আলেম ওলামাদের সঙ্গে পরামর্শ সভা ডেকেছে বলে জানা গেছে।

ওই সভায় চরমোনাইর নেতারা ছাড়াও আরো অনেক ইসলামিক নেতাকে রাখার চেষ্টা করছে তারা। তাদের দাবি অনেক ধর্মীয় নেতারা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন। সভায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তারা। আর মূর্তি বিষয়ে ইসলামের ভাষ্য নিয়ে তারা একটা যৌথ বিবৃতি দেবে।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গেপ্তারে যে দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংঠনগুলোর কাছ থেকে সে ব্যাপারেও নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হবে। বৈঠকটি ডেকেছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বা বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান।

বেশ কয়েকদিন ধরেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে আসছে কয়েকটি ইসলামি দল। জবাবে প্রগতিশীল সমাজও নানা বক্তব্য দিয়েছে। ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার।

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকও প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।

এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে একই কথার প্রতিধ্বনি করেন হেফাজত ইসলামীর আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, ‘কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলা হবে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী এসব বক্তব্যের পর দেশব্যাপী প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আলেম সমাজ ও শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। তারা বলেন, ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মীয় সম্পর্ক নেই। এর পেছনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদ্বেষ। যারা দেশের স্বাধীনতার প্রতি আস্থা রাখে না, তারাই এই ধরনের আন্দোলন শুরু করে।

আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ঘোষণার পর কথাসাহিত্যক স্বকৃত নোমান জাগরণকে বলেন, ‘এতদিন যে তারা না বুঝেই ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেছিল তারা এখন হয়তো বুঝতে পারবেন। আধুনিক পৃথিবীতে ইতিহাসের স্মারক হচ্ছে ভাস্কর্য। একটি খ্যাতিমান মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্ক বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেই তাদের রাজধানীতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে আগ্রহী হয়েছে। আশা করছি সৌদিসহ অন্যান্য ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোও দ্রুতই বাংলাদেশের সঙ্গে এমন চুক্তিতে আসবে। সেসব দেশেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হবে।

ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেন, ‘তারা তো আসলে ভাস্কর্যবিরোধী নন। তারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতাবিরোধী। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি চলছে। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী চলছে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়াই তাদের গাত্রদাহের কারণ। এজন্য তারা সরকারকে বিব্রত করতে চায়। তাই এইরকম ইস্যু নিয়ে সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার আছে। সেটা হলো- আল্লামা শফী মারা যাওয়ার পর হেফাজতের বিশাল সম্পত্তি নিয়েও তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ চলছে। সেটা থেকে সবার নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়ারও পাঁয়তারা এই ভাস্কর্যবিরোধী প্রচারণা।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ভাস্কর্যের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই। বিশ্বের অগ্রসর সমস্ত ইসলামিক রাষ্ট্রেই ভাস্কর্য রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশের তৌহিদি জনতার নামে যে বিরোধিতা করা হচ্ছে তা হাস্যকর। তারা কতটা পিছিয়ে আছে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, তারা নিজেরাই স্ববিরোধী। আকৃতি-প্রতিকৃতির বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়। আবার নিজের ছবি পাসপোর্টে ব্যবহার করে। টেলিভিশনের পর্দায় নিজের চেহারা দেখায়। পত্রিকায় ছবি ছাপায়। তাদের কথা অনুযায়ী ছবিটাও তো বিদয়াত। ছবিও তো একটা আকৃতি-প্রতিকৃতি। তাহলে সেটাও তো নিষিদ্ধ হতে হবে। কুশিক্ষিত, ধর্মান্ধ, মৌলবাদ ও মানবতার শত্রু। এই ধরনের মৌলবাদকে এখনই সমূলে উৎপাটিত করতে হবে।

ভাস্কর্যবিরোধী চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ইসলামি ঐক্যজটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই ব্যাপারে দুটি কথা বলতে চাই।

প্রথমত, সারা দুনিয়া যখন করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন এই যে ভাস্কর্য নিয়ে হল্লা আর চিৎকার করা, তার মানে হলো দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা।

দ্বিতীয়ত, উমাইয়া ও আব্বাসীয়সহ সব মুসলিম শাসক আমলে আরববিশ্বে ভাস্কর্য ছিল। আর ভারত উপমহাদেশে মুঘল আমলে অনেক ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। এই ব্যাপারে কখনো কোনো প্রতিবাদ হয়নি। বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়নি।

তুরস্কে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ঘোষণা আসার পর হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দুই দফা ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে গতকাল বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, একটি মহল ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে মেতে উঠেছে। ওলামায়ে কেরামকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।

Comments

comments