ঘটনা-১ : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুরায় বেড়াতে এসেছিলেন কলেজছাত্রী। গত ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে প্রতিবেশী যুবক মেয়েটির ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাইলে পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে অভিযুক্ত সোহেল মুন্সি ও ধর্ষণচেষ্টায় সহায়তার অভিযোগে ফিরোজা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযুক্ত সোহেল শহরের লক্ষ্মীডুরা মহল্লার মফিজুর রহমান ফিরোজ মুন্সীর ছেলে ও ফিরোজা বেগম দক্ষিণ শিয়ালকাঠীর লিয়াকত মার্কেট এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।
ভাণ্ডারিয়া থানার ওসি এসএম মাকসুদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক মেয়েটিকে উদ্ধার করে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় কলেজছাত্রী বাদী হয়ে ভাণ্ডারিয়া থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনা-২ : মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি থেকে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি রোদেলা লঞ্চ। নারী ও শিশুসহ ওই লঞ্চটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল।
৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতেই লঞ্চটি পদ্মা নদীর মধ্যে একটি ডুবোচরে আটকে যায়।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে এক ঘণ্টা কেটে যায়। লঞ্চে থাকা কেউই এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিল না। আশপাশে অন্য কোনো লঞ্চ বা নৌযানও দেখা যাচ্ছিল না। এতে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি ও উত্তেজনার বেড়ে যায়। এমন সময় বিপদগ্রস্ত ওই লঞ্চে থাকা নেয়ামতউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯-এ কল করেন। তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুরের চর জান্নাত নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে সংবাদটি দেওয়া হয়। আটকে পড়া লঞ্চ ও যাত্রীদের উদ্ধারে মুহূর্তে ছুটে যায় নৌ পুলিশের টিম। প্রথমে ট্রলারযোগে যাত্রীদের পার্শ্ববর্তী ঘাটে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ক্রেনের সাহায্যে আটকে পড়া ওই লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। গত ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদ্মা নদীতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা।
ভুক্তভোগী যাত্রী (কলার) নেয়ামতউল্লাহ জানান, ওইদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছিল। পদ্মা অনেকটা উত্তাল ছিল। যখন আমাদের লঞ্চটি ডুবোচরে আটকে যায়, তখন আমরা সবাই অনেক ভয় পেয়েছিলাম। সময় বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু উদ্ধারে কেউ আসছিল না। ঘণ্টাখানেক পর লঞ্চের যাত্রীদের অনেকেই কান্না করতে থাকেন। তখন কোনো দিশা না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করি। এরপর নৌ পুলিশ সদস্যরা এসে আমাদের উদ্ধার করেন।
পদ্মা নদীর ডুবোচরে আটকে পড়া দেড় শতাধিক লঞ্চ যাত্রীকে উদ্ধার ও তাদের সহায়তা করা একটি ঘটনা মাত্র। সারা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে এমন অসংখ্য মানুষ জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সহায়তা পাচ্ছেন।
আগুনের ঘটনা জরুরি ফায়ার সার্ভিস, আইনি সহায়তা পেতে জরুরি পুলিশ ও মুমূর্ষু রোগীর জন্য জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ এমনকি আত্মহত্যাপ্রবণ কোনো ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে মুহূর্তে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯। এটি বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি জরুরি কল সেন্টার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও ব্যক্তি প্রতিদিন ৯৯৯ কল করে জরুরি সেবা নিচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার কলারকে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছে জরুরি এ কল সেন্টারটি।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমরা উন্নত বিশ্বের মতো সেবা দিতে সক্ষম হচ্ছি। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার সেবা প্রার্থীকে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সেবা প্রার্থীদের মধ্যে নারী, শিশু, বয়স্ক থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণি-পেশা এবং বংশ-গোত্রের মানুষ রয়েছেন। এই কল সেন্টারের মাধ্যমে পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশকে একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে আমরা ৯৯৯সহ যত সেবা রয়েছে সবগুলোকে আরো আধুনিক করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ কল সেন্টার থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে চলতি (২০২০) বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯-এ সারা দেশ থেকে সর্বমোট ২ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৫০৩টি কল এসেছে। এর মধ্যে সত্যিকার অর্থে সেবা পাওয়ার জন্য ৪৯ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৩টি কল আসে এবং স্রেফ তামাশা ও অহেতুক কারণে ১ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৪০টি কল এসেছে। এসব কলের মধ্যে ২১ শতাংশ কলারকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং ৭৯ শতাংশ কল স্রেফ তামাশা ও অহেতুক কারণে আসায় তাদের কোনো প্রকার সেবা দেওয়া যায়নি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর জরুরি প্রয়োজনে সেবা পেতে মোট ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৭৫টি কল আসে। যার মধ্যে পুলিশি সহায়তা পেতে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৮টি কল, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪১ হাজার ৪৮৮টি কল এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা পেতে ৪১ হাজার ২০৯টি কল আসে। এদের প্রত্যেককে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হয়। ৯৯৯-এর পুলিশি সেবা চাওয়া কলার রয়েছে ৭৭ শতাংশ। আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সহায়তা চাওয়া কলার রয়েছেন ১২ শতাংশ এবং অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চাওয়া কলার রয়েছে ১১ শতাংশ।
৯৯৯-এর কলারদের মধ্যে ৩৯ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৬ জন পুরুষ, ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৭৫ জন শিশু এবং ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৯ জন নারী কলারকে সেবা দেওয়া হয়। এসব সেবা দিতে ডিপার্টমেন্টাল কল এসেছে ৫৮ হাজার ৬২৮টি কল।
অপরদিকে, ৯৯৯-এ অহেতুক কারণে ১ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৪০টি কল এসেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৮৪০টি ব্ল্যাংক কল। শুধুমাত্র মজা করার উদ্দেশ্যে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৫টি কল আসে। অহেতুক এবং অপ্রয়োজনে ৬০ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৫টি কল এসেছে। যাদের কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর (মিডিয়া) পরিদর্শক মো. আনোয়ার সাত্তার বলেন, আমরা সার্বিকভাবে জনমানুষের প্রয়োজনে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার কল আসে। এর মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে যেসব কল আসে তাদের আমরা যথাযথ সেবা দিচ্ছি। আর বেশি আসে প্রাঙ্ক বা ব্ল্যাংক কল বেশি আসে। অনেকেই মজা করে বা দুষ্টুমি করার জন্য ৯৯৯-এ কল করেন। সেগুলোকে আমরা সেবা দিতে পারি না। তবে ৯৯৯-এ আসা প্রতিটি কলই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, স্কুল-কলেজের পরীক্ষার সময় শিশুরাও ৯৯৯-এ কল করে তথ্য জানতে চায়। এছাড়া বিনা কারণে প্রতিদিন প্রচুর শিশু ৯৯৯-এ কল করে থাকে।
Comments
comments