পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা নারীকে পেটে লাথি মেরে গর্ভের বাচ্চাসহ হত্যায় অভিযুক্ত আসামি মোঃ সোহেল মিয়াকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার সাতাশি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। মোঃ সোহেল মিয়া নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় এলাকার মোঃ হাছেন আলীর ছেলে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানায় কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির।
তিনি জানান, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার আতকাপাড়া গ্রামের মোঃ আলাল উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তাঁর মেয়ে সুফিয়া খাতুন (২৭) এবং আট ও ছয় বছর বয়সী দুই নাতি-নাতনিও (সুফিয়া খাতুনের সন্তান) আলাল উদ্দিনের সাথে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার চন্দ্রপুর এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। এ সময় সুফিয়ার সাথে পরিচয় হয় নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় গ্রামের মোঃ সোহেল মিয়া(৩২) সাথে। সোহেলও চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। একই জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সোহেলের সাথে শখ্যতা গড়ে উঠে মোঃ আলাল উদ্দিনের। আলাল উদ্দিনের বাসায় আসা যাওয়া করতে করতে সুযোগে দুই সন্তানের জননী সুফিয়া খাতুনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায়।
কোম্পানি অধিনায়ক মো. আশরাফুল কবির জানান, এদিকে রাজমিস্ত্রির কাজ না থাকায় আলাল উদ্দিন তার মেয়ে এবং মেয়ের দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তখনও মোঃ সোহেল মিয়া প্রায়শই আলাল উদ্দিনের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে চলে আসত। একপর্যায়ে সোহেল মিয়া সুফিয়া খাতুনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটান। পরে গত ২১ মার্চ সুফিয়া খাতুনকে তার নিজ বসত ঘরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ধর্ষণের ফলে সুফিয়া অন্তঃসত্বা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য চাপ দেন সোহেল মিয়াকে।
পরে সোহেল মিয়া সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে চাপ দেন। কিন্তু সুফিয়া খাতুন এতে রাজি হননি। এ কারণে সোহেল মিয়া গত ১৪ আগস্ট বিকালে সুফিয়ার বাড়িতে এসে পেটে সজোরে লাথি ও পা দিয়া চাপ দিয়ে ধরে রাখেন। এতে সুফিয়ার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে আত্নীয় স্বজনরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির জানান, এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা র্যাবকে সুফিয়ার ৫ মাসের সন্তানের গর্ভপাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ আগস্ট সুফিয়ার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সুফিয়ার বাবা আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে নেত্রকোনা আদালতে আবেদন করার পর আদালতের আদেশে কলমাকান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রজু হয়। অন্যদিকে পুলিশ সুফিয়ার লাশের সুরুতহাল রির্পোট তৈরি করে ময়না তদন্ত করান। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর থানা পুলিশ পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে কলমাকান্দা থানার অফিসার ইনর্চাজ র্যাবকে নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও জানান, এদিকে মোঃ সোহেল মিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় আত্মগোপনে থাকে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার সাতাশি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। মোঃ সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে তার পূর্বের স্ত্রী নুরজাহানের দায়েরকৃত যৌতুক মামলায় ২০১৫ সালে দুই মাস কারাবাস ছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দূর্গাপুর থানায় একাধিক মারামারির মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আসামি সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কলমাকান্দা থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Comments
comments