ঢাকারবিবার , ১৭ আগস্ট ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. দেশজুড়ে
  3. পজিটিভ বাংলাদেশ
  4. ফটো গ্যালারি
  5. ফিচার
  6. ভিডিও গ্যালারি
  7. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাত হলেই নামে ডাকাত-আতঙ্ক

প্রতিবেদক
Kolom 24
আগস্ট ১৭, ২০২৫ ১:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাত হলেই বাড়িতে ঢুকে, নয়তো সড়কে গাড়ি আটকে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিচ্ছে ডাকাতের দল। সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অলিগলিতে দিনরাতে হচ্ছে ছিনতাই। আর চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। সবাই ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অপরাধীরা সহজেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ে নেমে পড়ে। তবে পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অপরাধী যে-ই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১২টি ডাকাতি, ছিনতাই ২৩টি, চুরি ৬৫টি ও সিঁধেল চুরি ৫০টি ঘটেছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৪৩ জন। অপরদিকে র‍্যাবের হিসাব বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির অভিযোগে ৭ জন, ডাকাতি প্রস্তুতিকালে ১০, ১৫ ছিনতাইকারী ও চুরির অপরাধে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, জেলা পুলিশ ও র‍্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে। নতুন-পুরোনো ডাকাতদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জামিনে মুক্ত ডাকাতেরাও তালিকায় রয়েছে। তবে এলাকাবাসী বলছে, প্রায় রাতেই বিভিন্ন বাড়িতে চুরি হচ্ছে। এ ছাড়া ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটছে তাদের।

ভৈরবে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ২ আগস্ট থানায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় জনতা। তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) জন্য শাড়ি ও চুরি নিয়ে আসে। তারা জানায়, ভৈরব শহরের কোনো সড়ক এখন আর নিরাপদ নেই। কেবল রাতে নয়, দিনেও লোকজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে পথচারীদের রক্তাক্ত জখম করছে। এই অবস্থায় ভৈরবে স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না।

গত ৫ আগস্ট কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর এলাকায় আবুল হাশেম মাস্টারের বসতবাড়িতে  ৮-১০ জনের একটি ডাকাত দল সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে। পরে ৮-১০ জনের ডাকাত দল বাসা থেকে বের হলে আবুল হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমান নিচে এসে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ধাওয়া করে ৫ জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। অন্যরা তখন পালিয়ে যায়। হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমানের দাবি, প্রথমে কেচি গেটের তালা ভাঙে। পরে দোতলা বাসার দরজার লক ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে। তারপর সবাইকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোট তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৪২ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন লুট করে।

গত ২৪ জুন গভীর রাতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভার শ্রীরামদী এলাকার বিএডিসি কোল্ডস্টোরেজ–সংলগ্ন ইছাম উদ্দিনের (৭০) বাড়িতে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি ডাকাত দল দেশি অস্ত্র নিয়ে ওই বাড়িতে ঢোকে। তারা একতলা বাড়ির চারটি ইউনিটের প্রতিটি কক্ষে ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট চালায়। তারা প্রতিটি ইউনিটের দরজা ভেঙে পরিবারের সদস্যদের জিম্মির পর একটি কক্ষে বন্দী করে রাখে। এরপর প্রতিটি কক্ষের আলমারি ও ওয়ার্ডরোব ভেঙে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়। সেই সঙ্গে আসবাব ভাঙচুরসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ করে। ইছাম উদ্দিন দাবি করেন, ডাকাতেরা তাঁর কাছ থেকে চার লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে। সবার কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে তারা।

গত ২৯ জুন গভীর রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার লক্ষীপুর লালু-কালু সংযোগ সড়কের কাশবন রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন রাস্তায় একটি প্রাইভেটকার আড়াআড়ি করে রেখে ট্রাকের গতিরোধ করা হয়। এরপর ৫-৬ জন চাপাতি, রামদা ও ছুরি নিয়ে পিকআপে ভাঙচুর চালায়। এসময় ডাকাতরা পিকআপ চালক ও হেলপারকে মারধর করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে হাঁসভর্তি ট্রাক, ১টি মোবাইল ও নগদ ৬ হাজার ৫০০ টাকা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।

গত ৩১ মার্চ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরে ডাকাতি শেষে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। ওই গৃহবধূর স্বামী দিনে চা বিক্রি করেন। রাতে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর পাহারা দিতে যথারীতি স্বামী ঘর থেকে বের হয়ে যান। রাত ১০টার পর গৃহবধূ তাঁর তিন ও আট বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। গৃহবধূর ঘরের ভিটে পাকা হলেও বেড়া ও চাল টিনের। রাত পৌনে দুইটার দিকে জানালা কেটে ডাকাতেরা ঘর থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যান। যাওয়ার আগে অস্ত্রের মুখে গৃহবধূকে জিম্মি করে একজন ধর্ষণ করেন বলে দাবি করেন ওই গৃহবধূর স্বামী।

জেলা শহরের গাইটাল শ্রীধরখিলা এলাকার বাসিন্দা এ এস এম সুমন বলেন, জানমালের নিরাপত্তা নাই। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বেড়ে গেছে। অপরাধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে আর অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরেক বাসিন্দা সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে প্রতিটি এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েক গুণ। সন্ধ্যার পর বাইরে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। যেহেতু রাজনৈতিক কোনো দল সরকারে নেই, সেই সুযোগে প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের একটা সুযোগ নিজেদের রিফর্ম করে সুনাম তৈরি করার।

এ নিয়ে কথা হলে জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক ও সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ফয়জুল করিম মুবিন জানান, জামিন দেওয়ার বিষয়টি বিচার বিভাগের এখতিয়ার এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। এখানে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কিন্তু রাজনীতিবিদদের স্বচ্ছতা, অপরাধীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় না দেওয়া, প্রশাসনিক কার্যক্রম যথাযথভাবে নেওয়া এবং বেকারত্ব দূরীকরণ করলে একসময় ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই নিরসন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে মাইকিং করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পথনাটক করতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির বলেন, ‘ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে আমাদের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি ও জোরদার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘মাদক, জুয়া, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ সব অপরাধে আমরা জিরো টলারেন্স। এভাবেই আমরা এগোচ্ছি। অপরাধ যে-ই করুক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Comments

comments