তখন ছিলেম আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ ক্লাসের ছাত্র
রাতে পড়াশোনা শেষ করে ঘুমিয়ে ছিলাম
ফজরের নামাজের আযানের ধ্বনির সাথে হঠাৎ
ভেসে আসলো কামানের ধ্বনি শাহবাগের
বেতার ভবন থেকে ভেসে আসলো পিতা তোমার মৃত্যুর খবর
বন্ধুদের ঘুম থেকে জাগালাম ও বন্ধুরা আর ঘুমাইওনা,
শোন দুঃসংবাদ, বাংলার সার্দুল আর নেই!
চারদিকে মানুষের হতবিহ্বল চেহারা আর উৎকন্ঠা
কি হলো! আহ কি হলো! আহ কি হলো!
পড়ার টেবিলের ছোট রেডিওটা অন করে বন্ধুরা
বার বার শুনে নিলাম কুলাঙ্গারদের ঘোষনা
বঙ্গবন্ধু নেই, চিরবিদায় নিয়েছেন তাঁর
নিজের রেখে যাওয়া স্বাধীন বাংলায়।
অথচ কথা ছিল আজ বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে আসবেন। আহ এ কি হলো!
গতরাতে কামাল ভাই তো বাসায় গেছেন তার কি হলো,
কি হলো পরিবারের অন্য সদস্যদের
পরে হলের সামনে ট্যাংকের শব্দ, রাস্তায়
মানুষের ছোটাছোটিতে আমরা বুঝতে পারলাম
সবই শেষ। খবর এলো বত্রিশ নম্বর রক্তের
বন্যায় ভেসে গেছে।
আহ এ কি হলো! এ কি হলো! এ কি হলো!
হল ছেড়ে বন্ধুরা চলে গেলাম বাহিরে ব্যাথাতুর হৃদয় নিয়ে,
পিতা আজো আমি কাঁদি
আমি কাঁদি মৃত সকল সদস্যদের জন্য..
আজ পয়তাল্লিশতম শাহাদাত দিবসে তোমাকে
হৃদয় দিয়ে স্মরণ করি।
স্মরণ করি তোমার আত্মত্যাগের কথা
তোমার সমস্ত হৃদয়েই ছিল বাংলা আর বাঙালী
পিতা, তোমার আত্মত্যাগ স্বার্থক হয়েছে
তোমার বাঙালীরা আজ স্বাধীন তোমার জন্যই
শুধু নেই তুমি। শুধু নেই তুমি।
কোটি বাঙালীর হৃদয় হতে তোমার জন্যই সর্বক্ষনই
প্রার্থনা– করুণাময়ের কাছে,
তোমার পরিবারের হারানো শহীদ সদস্যদের
নিয়ে জান্নাতবাসী হও।
আজো বলি, আহা কি হলো! আহা কি হলো!
আজ আমাদের শপথ হোক শতশহীদদের
রক্ত ও তোমার রক্তে গড়া এই বাংলাকে আমরা
তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়বো।
কোটি মানুষের অশ্রুসজল নয়নে তোমাকে
পনেরোই আগষ্ট স্মরণ করি
গতরাতে সিলেটে শ্রাবণের অঝোর ধারার ঝড়া বৃষ্টি
কান্নার জলের সাথে এক হয়ে ঝড়েছে।
শ্রাবণের কালো ভেসে আসা মেঘগুলোও
মলিন ছিল, গতরাতটাও শোকে ছিল মুহ্যমান
ভোরের পাখিরাও কিচির-মিচির করেনি
পাখিগুলোর মনও ছিল শোকে ব্যাথাতুর
প্রতিদিন আসা প্রজাপতিরাও আজ আসেনি
ওদের সাথে সুর মিলিয়ে আবারও বলি
আহ এ কি হলো! আহ এ কি হলো!
প্রতিদিনের প্রার্থনায় তোমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি
হে করুণাময়,
মোদের জাতির পিতাকে জান্নাতুল
ফেরদৌসে স্থান করে দাও
আরো স্থান করে দাও সকল শহীদদেরকে জান্নাতে
হেফাজত করো
রেখে যাওয়া মুজিবের বাংলা ও বাঙালীদের।
লেখকঃ নৃবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
Comments
comments