ঢাকারবিবার , ২১ এপ্রিল ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১৮ ঘন্টা গণনার পর পাগলা মসজিদের দান বাক্সে পাওয়া গেল ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

উজান-ভাটির জেলা কিশোরগঞ্জ। এই জেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক মসজিদ। রয়েছে মসজিদ স্থাপত্যের সোনালী ঐতিহ্য। তবে জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত পাগলা মসজিদ বর্তমানে দেশ-বিদেশে কিশোরগঞ্জের পরিচিতি স্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যত যাচ্ছে পাগলা মসজিদের খ্যাতি ও জৌলুস এবং দানের পরিমাণ ততই যেন বাড়ছে।

সর্বশেষ হিসাবে, ২০২৩ সালে চার ধাপে পাওয়া গিয়েছিল ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা। ২০২২ সালে তিন ধাপে পাওয়া গিয়েছিল ১১ কোটি ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯২ টাকা। আর ২০২১ সালে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ ১৯ হাজার ৬২৪ টাকা।

এবার ৪ মাস ১০ দিন পর শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে পাগলা মসজিদের ১০টি দান বাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৭ বস্তা টাকা। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দিনভর গণনা চলে তারপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১টা বেজে ৩০ মিনিট পর্যন্ত টানা ১৮ ঘন্টা টাকা গণনার পর দান বাক্স থেকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে, যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ১৮ দিনে ওই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ২৩ বস্তা টাকা। টাকার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।

রাত ১টা বেজে ৩০ মিনিটে টাকার এ হিসাব নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ। তিনি বলেন, ‘টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে।’

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, সহকারী কমিশনার রওশন কবীর, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, আজিজা বেগম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকেরা গণনাকাজ তত্ত্বাবধান করেন।

টাকা গণনায় পাগলা মসজিদ মাদরাসার ১০২ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ১৭৫ জন কাজ করছেন। তাদের সহায়তা করছেন মসজিদ-মাদরাসার ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

মসজিদ কমিটি সূত্র জানায়, মসজিদটির প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বেশকিছু জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি রয়েছে, দেওয়ান হৈবৎ খাঁর ধারাবাহিকতায় ঈশা খাঁর ৭ম পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খাঁ সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে হয়বতনগরের জমিদার হয়েছিলেন। বংশ-তালিকার ধারাক্রমে জিলকদর খাঁ দেওয়ান হৈবৎ খাঁর পৌত্র বা দৌহিত্র ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। জমিদারিপ্রাপ্ত হলেও দেওয়ান জিলকদর খাঁর জমিদারির প্রতি কোনোরূপ মোহ ছিল না। তিনি জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বাইরে অনেকটা আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী থাকতেন। সংসার-বিবাগী ও উদাসী প্রকৃতির এই মানুষটি সবার কাছে ‘পাগলা সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন। জমিদারির নৈমিত্তিক দায়িত্বের প্রতি তার কোনো মনোযোগ ছিল না। প্রায়শই তিনি আজকের পাগলা মসজিদ যেখানে স্থাপিত, সেখানে এসে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো বসে থাকতেন। নরসুন্দাপাড়ের এই স্থানটিকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন তার প্রাত্যহিক ধ্যানের স্থান হিসেবে। পরে জমিদারবাড়ির তত্ত্বাবধানে পাগলা সাহেবের আরাধনার জন্য এই স্থানটিতে একটি ক্ষুদ্র মসজিদ তৈরি করে দেয়া হয়। এ কারণেই পরবর্তী সময়ে মসজিদটির নামকরণ করা হয়- ‘পাগলা মসজিদ’।

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রথমে ১০ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এর আয়তন আরও বাড়ানো হয়েছে। মসজিদটি এখন প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে।

রাজধানী ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সামসুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা আলি। তাঁরা এসেছেন পাগলা মসজিদে। বেলা ১টার দিকে মসজিদ প্রাঙ্গনে কথা হয় তাদের সাথে। তাঁরা বলেন, অলি আল্লাহর মসজিদ এই পাগলা মসজিদ। আমাদের মানত ছিল। আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে তাই মানতের টাকা দিলাম।

নেত্রকোনা থেকে আসা এক মধ্যবয়সী নারী সুলতানা। কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, আমার ছেলে অসুস্থ ছিল। মানত করছিলাম আমার ছেলে সুস্থ হলে মানতের টাকা দিব মসজিদে। আমার ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তাই মানতের টাকা দিয়ে গেলাম।

পাগলা মসজিদের পাশেই শিক্ষকপল্লি এলাকা। ওই এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। আলমগীর হোসেন পাগলা মসজিদে এসেছেন টাকা গণনার এই এলাহি কাণ্ড দেখতে। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মসজিদের প্রতি মানুষের ভক্তি অন্যরকম। কোনো বিপদ, সমস্যা ও সংকটে পড়লেই মানুষ এই মসজিদে মানত করে। নিশ্চয়ই মানুষ এই মসজিদে দান করে শান্তি পায়। নইলে মানুষ এভাবে বিশেষ একটা মসজিদে দান-খয়রাত করত না। শহরে তো মসজিদের অভাব নেই। অন্য কোনো মসজিদে তো লোকজন এভাবে দান করে না।’

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আটটি দানবাক্স থাকলেও দানের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের আগস্ট মাস থেকে আরও একটি দানবাক্স বাড়ানো হয়। পরে এবার ৯টি দানবাক্স ভরে গেলে আরও একটি দানবাক্স বাড়ানো হয়। এখন পাগলা মসজিদে দানবাক্সের সংখ্যা ১০টি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, দিন দিন যেহেতু দানের টাকা বাড়ছে সেহেতু আমরাও নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা দেয়া হয়।

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়। পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাইয়ের পর নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।

Comments

comments