ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৬ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ১৬, ২০২০ ৭:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এক মহা সংকটময় সময় পার করছে। এই সংকটের নাম করোনা ভাইরাস যা কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারির রূপ ধারন করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১০ টি দেশে এই মহামারির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পরেছে এবং বিশ্বের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজারের উপর প্রাণহানি ঘটেছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানতে পারা যায় যে প্রতি শতবর্ষ পরপর পৃথিবীতে একটি মহামারি আসে। অনেকে বলে থাকেন যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য প্রকৃতিতে এমন বিপর্যয় আসে। বিগত একশ বছর পূর্বের মহামারি স্প্যানিশ ফ্লু জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। ধারণা করা হয় স্প্যানিশ ফ্লুতে পৃথীবির ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং প্রায় ৫ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই মহামারি শুধু প্রাণহানি ঘটায় তাই নয় সম্পূর্ণ জনজীবন বিধ্বস্ত করে দেয়। সবচেয়ে বড় আঘাত হানে অর্থনীতিতে। যেহেতু এই মহামারি রোগের কোন ঔষধ বা টীকা আবিষ্কার ইতোমধ্যে হয়নি, তাই প্রতিরোধ ব্যাবস্থায় এই রোগের প্রকোপ কমানোর একমাত্র উপায়। আঞ্চলিক লকডাউন, ঘরে থাকা ও স্ব-পৃথকীকরণ গুলো হল এই মহামারির প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা।

করোনার বিস্তার রোধে চারিদিকে যখন লকডাডন চলছে তখন সভ্যতার সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সকল দেশে থমথমে অবস্থার বিরাজ করছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বাংলাদেশে। যদিও এই করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রমণ শুরু করে গত মার্চ মাসে, সাধারণ মানুষক এখনো সচেতন হচ্ছে না। কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও কতিপয় জেলা সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, অচিরেই দেশের সকল জেলা লকডাউন ঘোষণা দিতে হতে পারে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ এবং বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে জনগণের অন্নসংস্থান জরুরী হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রী দাবী করেছেন করোনা ভাইরাসের কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে না যদিও বিশ্বব্যাংক অনুমান করছে এই পরিস্থিতে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১%-২% কম অর্জন হতে পারে। অন্য এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে যে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ১% থেকে ২% -এ নেমে আসতে পারে এমনকি কিছু কিছু দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মকও হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের এমন প্রতিবেদনের কারন হিসেবে দেখিয়েছে এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা এই মহামারির সময় কাজ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশের প্রায় ২১% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এছাড়া এদেশের অধিকাংশ মানুষের আয় বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয়ের অনেক কম। এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিনমজুর, গার্মেন্টস শ্রমিক, ভাসমান ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে এদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ এদের কাছে এতটুকু সঞ্চয় নেই যে তারা এই মহামারির সময় ঘরে বসে কাটিয়ে দিতে পারবে। এই মহামারি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ তুলনামূলকভাবে কম সচেতন, সেহেতু এই মহামারির ঔষধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে ঘরে থাকতে হবে মানুষকে। কিন্তু এই লকডাউন কত দিন পরে উঠবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা প্রায় অসম্ভব। যদি কমপক্ষে দেশে ২ মাসও লকডাউন থাকে তাহলে বাংলাদেশের প্রাক্কলিত জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান ধরে রাখা। বাংলাদেশ প্রধানত বিদেশে পণ্যদ্রব্য রপ্তানি ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকের রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। প্রায় প্রতি বছরেই বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থাকে অর্থাৎ বৈদেশিক রপ্তানি আয় থেকে বৈদেশিক আমদানি ব্যয় বেশি থাকে। এই ঘাটতি অংশটুকু পূরণ করে থাকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০% আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ আসে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি এই দেশগুলিতে। এতে করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রপ্তানি আয় কমেছে ৪.৭%। বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি ফলে বিদেশি ক্রেতারা তাদের ওডার বাতিল করছে। যার দরুন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মহামারি প্রভাবে বিশ্ববাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লকডাউনের কারণে মানুষের আয়ও কমে গেছে। এতে করে প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়ায় দেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয় ১০% বৃদ্ধি পেলেও ফেব্রুয়ারী মাস থেকে তা নিম্নমুখী। সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে রেমিট্যান্স আয় আরো কমে যেতে পারে।

বেকারত্বের হার নিয়ন্ত্রণ করা আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে বাংলাদেশ সরকারের জন্য। যদিও সরকারিভাবে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.৩%, করোনা ভাইরাস মহামারি পরে এই হার কত হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমেরিকায় করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপে ৬৬ লক্ষ মানুষ তাদের চাকুরি হারিয়েছে (সূত্রঃ বিবিসি নিউজ)। এডিবির এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশের করোনা মহামারিতে প্রায় ৮ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৩০ জন মানুষ চাকুরী হারাতে পারে এবং এরূপ খারাপ পরিস্থিতিতে জিডিপির ১% ক্ষতি হতে পারে (সূত্রঃ দ্য ডেইলি স্টার নিউজপেপার)। বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লক্ষ গার্মেন্ট কর্মী রয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বে মন্দাভাবের জন্য যখন বিদেশি ক্রেতারা ওডার বাতিল করতে থাকবে তখন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় কমানোর জন্য কর্মী ছাটাই করবে। শুধু পোশাক কারখানাগুলোতেই এর প্রভাব পড়বে তা নয়, সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপর এ প্রভাব পড়বে। এতে করে দেশে ভাসমান বেকারত্ব বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অনেকে চাকুরি হারাতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ১ কোটির উপরে প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর চলতি বছরে জ্বালানি তেলের দাম ৫০% কমে গেছে। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও রাশিয়া জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। যদি তেলের উৎপাদন কমে যায় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হবে। কোভডি-১৯ সংক্রমণের প্রভাবে দেশের বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যদ্রব্যের চাহিদা কমে গেলে ব্যয় হ্রাসের জন্য কর্মী ছাটাই করতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বেচাকেনা বন্ধ থাকাতে অধিকাংশ ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে বেকার হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার নিদিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাটাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এদেশের একাংশ মানুষের পেশা দিনমজুর শ্রমিক, কৃষক, মুদি দোকানি, গার্মেন্টস কর্মী, রিক্সা-ভ্যান চালক ইত্যাদি। তারা তাদের নিম্ন আয়ে সংসার চালায়। তাদের অধিকাংশ পরিবার একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় দিন এনে দিন খাওয়ার মত জীবন অতিবাহিত করে। তাদের কাছে ১ মাস থেকে ২ মাস কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে খাওয়ার মত সঞ্চয় নেই।

সম্ভাব্য খাদ্য সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করাটাও বাংলাদেশ সরকারের বেশ বেগ পোহাতে হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্যের সরবরাহ করাটা কঠিন কাজ। যদিও বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ ইতমধ্যে ধান, মাছ, ডিম ও পোল্ট্রি মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও গত বছর বন্যার সময় চাল আমদানিতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়েছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এমন মহামারি পর দুর্ভিক্ষ নেমে আসার সম্ভবনা বেশি থাকে। একেতে বিশ্ব উৎপাদন স্থবির হয়ে আছে তার উপর আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে পঙ্গপালের উপদ্রবে পৃথিবীতে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে এবং কৃষিকাজ একটি অলাভজনক পেশায় পরিণত হওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। এই করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এই মহামারির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা ও মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি পাবে আর বাজারে বিলাসী পণ্যদ্রব্যের চাহিদা ও মূল্য উভয়ই হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউন থাকার দরুন এবং বাজারে চাহিদা কমার কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকবে, তখন এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় এবং বাজার চাহিদা কমার প্রভাব শেয়ার বাজারেও পড়বে। একপর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবে ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুঁজির সংকটে শিল্পের উন্নয়ন ব্যহত হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যের অর্থে ব্যবসা করে। যখন মহামারির কারণে ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে তখন এই প্রতিষ্ঠানগুলোও দেউলিয়া হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশের প্রায় ৯৫% ব্যববসায় প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র আকারের। লকডাউন অবস্থা থাকায় এদের মূলধন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এই মহামারি কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হলে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সরকারকে এই মূহুর্তে কিছু স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এই সংকট মোকাবেলায়। সরকারকে এই উদ্ভূব পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে সামাজিক বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। এই সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় জনগণকে সচেতন করতে হবে এই মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে। সবাইকে ঘরে রাখার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়েজনীয় বাজার যেমন খাদ্যদ্রব্য, কাঁচাবাজার, ঔষধের দোকান ও কৃষি পণ্যের দোকান খোলা রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। যদিও বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ব্যবস্থা চালু রেখেছে, কৃষকের কৃষি পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে সরকারিভাবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যখন মানুষের কাছে অর্থ থাকবে না তখন মানুষ খাদ্যের তাগিদে লকডাউন ভেঙে কাজের সন্ধানে যাবে এতে করা মহামারি প্রকোপ আরো বাড়ার সম্ভবনা থাকবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে অর্থনীতকে টিকিয়ে রাখতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭২,৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, কৃষকদের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, ডাক্তার ও ব্যাংকারদের দুঃসময়ে কাজ করার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। এই মহামারিতে অধিকাংশ প্রান্তিক মানুষের আায় বন্ধ হওয়ায় তাদের সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে যাবে। ফলে অর্থনীতিতে পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। একদিকে মানুষ অর্থ অভাবে খাদ্যের জন্য সামাজিক বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ড লিপ্ত হবে অন্যদিকে পণ্যের চাহিদার অভাবে যোগান বন্ধ হয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই সরকারকে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি বাজারের চাহিদা ঠিক রাখার জন্য অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। যদিও এই হঠাৎ বাজারে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে, তবুও এই সংকট মোকাবেলায় সরকারকে এমন আর্থিক নীতি গ্রহণ করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে। সরকার এই নতুন অর্থ সরবরাহের একটি অংশ ত্রাণ হিসেবে এবং অপর অংশটি ঋণ হিসেবে। স্বল্প মেয়াদে এই অর্থ যেমন চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখবে তেমনি মধ্যমেয়াদে সরকার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে পারবে। মুদ্রাস্ফীতি পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে। সরকারকে এই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে মধ্যমেয়াদে কিছু অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে যেমন খোলা বাজারে বন্ড ছাড়া, বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইত্যাদি। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার কমাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করতে এই অর্থ সরবরাহ নীতি কার্যকরী হবে বলে আশা রাখছি। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য স্বল্পমেয়াদে প্রণোদনা প্যাকেজ এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদান ও কর সুবিধা প্রদান করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য রেপো হার ও সি আর আর কামিয়েছে। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ এই সময়ে পুনঃতফসিলি না করার নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষি ঋণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সঠিক ক্ষতিগ্রস্তকে প্রদান করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ ও অর্থ সুবিধা প্রকৃত ক্ষতিগ্স্তকে সুশাসন ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। নতুন শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য বিনা সুদ বা স্বল্প সুদে ঋণ ও কর অব্যহতি সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া সরকারকে এমন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে যাতে যেই সকল প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ সুবিধা পাচ্ছে তারা যেন কর্মী ছাটাই না করতে পারে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয় সেই দিকে প্রশাসনের নজর ও তদারকি রাখতে হবে।

উক্ত করণীয় নীতিমালার পাশাপাশি সরকারকে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে একটু সুনজর দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য শুধুমাত্র একটি সেক্টরের উপর নির্ভর করলে চলবে না বরং নতুন নতুন বিভিন্ন সেক্টর খুঁজে বের করে বৈচিত্র্যকরণের নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কৃষি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভর্তুকি ও আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। উৎপাদনশীল খাতের পাশাপাশি সেবা খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। পরিশেষে দেশের জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে কারণ এই মহামারির ঔষধ বা টীকা আবিষ্কারের পূর্বে প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচী একমাত্র হাতিয়ার এবং জনগণ সচেতন না হলে স্প্যানিশ ফ্লুর মত এই রোগ আবার ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি, যেকোন মহামারি মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে।

লেখকঃ
চন্দন কুমার পাল
সহকারী অধ্যাপক
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

Comments

comments