কাঠবাদাম একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ। যার বৈজ্ঞানিক নাম (Terminalia Catappa)। গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে। যা পরিপক্ক ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া যায়। এই বীজগুলোর কাঠ বাদাম নামে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধযুক্ত। কাঠ বাদাম সারা বিশ্বে ভারতীয় বাদাম হিসেবেও পরিচিত। তবে এর আদি নিবাস কোথায় তা এখন পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। ধারণা করা হয় আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া অবধি উষ্ণ অঞ্চলে জন্মায়। আমেরিকা মহাদেশেও এ গাছটির বিস্তার ঘটেছে।
কাঠ বাদামের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি, ই, ডি এবং উপকারী ফ্যাট। এ বাদাম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্ত স্বল্পতা দূর করে, চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। কাঠবাদামে রয়েছে অগনিত উপকারিতা।
কাঠ বাদামকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন বেঙ্গল আখরোট, সিঙ্গাপুর আখরোট, ইবেলবো, মালাবার আখরোট, নিরক্ষীয় আখরোট, সমুদ্র আখরোট, ছাতা গাছ, আব্রোফো ন্কাটি, জানমান্দি ইত্যাদি। বাংলাদেশে কাঠ বাদাম হিসেবেই এ বাদামের পরিচিতি। কিশোরগঞ্জে কিছু কিছু গাছ দেখা যায় হর্টিকালচার সেন্টার, প্রজাপৎখিলা, কাটাবাড়িয়া, লতিবাবাদ, যশোদলসহ এমন অনেক জায়গাতেই দেখা যায়। কাঠ বাদাম গাছের ফল বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন কিছু কিছু মানুষ।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোডে প্রায়শই দেখা যায়, এক যুবক বসে আছে কাঠ বাদাম নিয়ে। তার কাছ থেকে কাঠ বাদাম কিনে নেয়ার জন্য প্রচুর লোক ভীড় করে। স্বাবলম্বি হওয়ার চেষ্টায় এ যুবক শুরু করেছেন কাঠ বাদাম বিক্রি। গ্রাহকেরও কমতি নেই তার ভাসমান দোকানে। যুবকের নাম মোঃ নূরুদ্দিন সুজন। সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের প্রজাপৎখিলা গ্রামে তার বাসস্থান। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ থেকে ৩ বছর যাবত সে ভাসমান দোকানে কাঠ বাদাম বিক্রি করছে। বিক্রি হয় ভালো। কেজি প্রতি ৮শত টাকা দরে কাঠ বাদাম বিক্রি করছেন। আবার একটি ফলও বিক্রি করছেন ৩০ টাকায়। শিশু-কিশোর, আবাল, বনিতা, বৃদ্ধ মানুষজন ভীড় করেন তার কাছে। শিশুরা আকৃষ্ট হয় বেশি বাদাম ফল দেখে। সুজন জানায়, গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কাঠ বাদাম বিক্রি করেন। সুজন এ বাদাম চট্টগ্রাম থেকে কিনে আনেন বলেও জানান।
কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কাঠ বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ গাছের পরিচর্যা করলে ভালো ফলন আশা করতে পারবে কৃষকেরা। বর্তমানে কেজি প্রতি ৮শত টাকা বিক্রি হচ্ছে এ বাদাম।
Comments
comments