ঢাকাশুক্রবার , ২৪ মার্চ ২০২৩
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কিশোরগঞ্জে ব্রয়লার মুরগির দাম লাগামছাড়া, চক্রের কাছে জিম্মি খামারিরা

প্রতিবেদক
Kolom 24
মার্চ ২৪, ২০২৩ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

গত দুই মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। সৃষ্টি করেছে ইতিহাস। দিন দিন গরিবের মাংস খাওয়ার একমাত্র পথ হয়ে যাচ্ছে বন্ধ। তা দেখবে কে? গরিবের যে কেউ নেই। দামের লাগাম টেনে ধরবে কে? মুরগির বাজার যেন লাগামছাড়া! দুই মাস আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। সেই মুরগির রেকর্ড দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। সোনালি মুরগির দামও কেজি ৩৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুরগিও।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা খাবারের দাম ও সরবরাহের খরচ বৃদ্ধির কথা বলে মুরগির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে বেশি দামে কিনে খুচরা বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, বড় বড় কোম্পানি বাচ্চা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এটা তাদের দাম বাড়ানোর কৌশল। সরকার যেন বাচ্চার দাম, খাবারের মূল্য এবং মুরগির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তা-না হলে এ সেক্টর থেকে তৃণমূল খামারিরা সরে যাবে। এমন যদি কোনো আইন থাকত হ্যাচারি মালিক শুধু বাচ্চা উৎপাদন করবে কিন্তু লালন পালন করতে পারবে না তাহলে এ চক্র ধূলিসাৎ হয়ে যেত। তৃণমূল খামারিরা বাঁচত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছর আগেও ব্রয়লার ফিডের ৫০ কেজির বস্তার মূল্য ছিল ১৭০০ টাকা। খাদ্যের মূল্য প্রতি মাসে বারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে বস্তা প্রতি ৩৬০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। জেলায় প্রায় ৫ হাজার ৫০০টি পোলট্রি খামার ছিল। খাবারের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ার কারণে প্রায় সাড়ে তিন হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

বাজারে আসা রিকশাচালক হান্নান আক্ষেপের সুরে বলেন, ভাই আমরা কি মানুষ? আমাদেরকে কি মানুষ হিসেবে গণ্য করে কেউ? ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২৪০ টাকা। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের পক্ষে ২৪০ টাকা দিয়ে ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনে খাওয়া আকাশকুসুম চিন্তা হয়ে গেছে। ভাইরে আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না। আমার দিনে রোজগার ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। আমার পক্ষে এখন ব্রয়লার মুরগি কিনে খাওয়া সম্ভব না।

বাজার করতে আসা শহীদুল্লাহ্, মানিক, আলমগীর, কামরুলসহ কয়েকজন বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এত দাম দিয়ে মুরগি কেনা কষ্টকর। দামের কারণে গরু কিংবা খাসির মাংস অনেক আগে থেকেই নাগালের বাইরে ছিলো। এখন ব্রয়লার মুরগির দামও নাগালের বাইরে। দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষেরা সমস্যায় পড়ে গেছি। এখন মাসেও মনে হয় মাংস খাওয়া হবে না আমাদের।

সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের চৌধুরীহাটি গ্রামের খামারি শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ব্যবসায় লোকসানের কারণে আমি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পুনরায় ব্যবসা চালু করেছি। ৩ ব্যাচের মধ্যে ২ ব্যাচ লোকসান হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই ৫ থেকে ৬ বার খাবারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এলাকায় অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। খাবারের দামের সাথে বিক্রয়মূল্য সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের খামারি এমডি শফিউল্লাহ বলেন, আমরা চক্রের মধ্যে পড়ে গেছি। কোম্পানি কিছুদিন আগেও বাচ্চার দাম সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বড় বড় কোম্পানি চক্র তৈরি করে বাচ্চা বিক্রি করছে ৭০-৮০ টাকা। যা আদৌ কাম্য না। বাচ্চা লালন পালন করে বিক্রির উপযোগী করতে খামারির অনেক পরিশ্রম এবং টাকা ব্যয় হয়। মাস শেষে বিক্রির সময় দেখা যায় চক্রের কারণে বাজারে বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে উঠানামা করছে। যার কারণে তৃণমূল খামারিরা লোকসানের বোঝা সইতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ. কে ফজলুল হক বলেন, করোনা মহামারির ২ বছরে এই সেক্টরে খামারিদের প্রচুর লোকসান হয়েছে। মুরগির খাবারের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বছরে ৮টি ব্যাচের মধ্যে ৬টি ব্যাচেই লোকসান গুনতে হয় প্রান্তিক খামারিদের। মুরগি উৎপাদন কমে গেছে কিন্তু চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে দাম বৃদ্ধি হয়েছে। এটা সাময়িক সমস্যা।

খামারিরা দাবি করছে বড় বড় কোম্পানি বাচ্চা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে এমন প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ. কে ফজলুল হক বলেন, বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ডিম দেয়া পেরেন্টস মুরগিগুলো রিজেক্ট করে দিয়েছে। যার কারণে বাচ্চা উৎপাদন কমেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারি পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিক বলেন, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে ব্রয়লার মুরগির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য আমরা কাজ করছি।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নজরুল ইসলাম বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারিগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এই দুটি কারণেই মুরগির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম ৬০-৬৫ টাকা হয়েছে। আমরা হ্যাচারি মালিকদের বলছি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য।

Comments

comments