সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত তিনগুণ বেশি ভাড়া দিতে দিতে নাকাল কিশোরগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ। বৈশ্বিক করোনা মহামারির সুযোগে পরিবহন মালিক সমিতির এমন অরাজকতায় বিশ্বয়ের শেষ নেই কিশোরগঞ্জবাসীর। প্রকাশ্য দিবালোকে বিভিন্ন বাস সার্ভিসের কাউন্টার থেকে যাত্রীদের হাতে তিনগুণ বেশি ভাড়ার টিকেট তুলে দেয়া হচ্ছে। অথচ এসব অনিয়মের খবর নাকি জানে না কিশোরগঞ্জ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত বাস ভাড়ার কথা শুনে অবাক হয়েছেন খোদ সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ।
-
পরিবহন মালিকদের অরাজকতা
-
২০ টাকার ভাড়া ৭০ টাকা!
-
তিনগুণ বেশি বাসভাড়ায় নাকাল যাত্রীরা
কলম২৪.কমের অনুসন্ধান বলছে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বাসস্ট্যান্ড থেকে পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার থানাঘাট পর্যন্ত দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এই সড়ক পথে নিয়মিত চলাচল করছে জলসিড়ি এক্সপ্রেস (প্রা:) লিমিটেড ও উজানভাটি পরিবহনের বাস। এই সড়ক পথে ওই দুটি কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিসের বিকল্প বাস সার্ভিস নেই। এই সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে কটিয়াদী থেকে থানাঘাট পর্যন্ত মাত্র ১৫ কিলোমিটার সড়কে জলসিড়ি এক্সপ্রেস ভাড়া আদায় করছে ৭০ টাকা। অন্যদিকে উজানভাটি পরিবহন আদায় করছে ৬০ টাকা। যেখানে সরকার নির্ধারতি ভাড়া ২১ টাকা ৩০ পয়সা।
অন্যদিকে, পাকুন্দিয়া উপজেলার থানাঘাট থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ওই সড়ক পথে নিয়মিত চলাচল করছে কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস ‘অন্যানা সুপার ও অন্যানা ক্লাসিক।’ ওই ২৫ কিলোমিটার সড়কে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৯০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ৫৪ টাকা ৫০ পয়সা বেশি। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে থানাঘাট হয়ে গাজীপুর কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়কে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৩০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ৬৯ টাকা ৫৮ পয়সা বেশি। আর নিত্যদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই বিভিন্ন অজুহাতে এক লাফে বাস ভাড়া হয়ে যায় চার গুণ বেশি।
বাসযাত্রী মুসা মিয়া জানান, ‘লক্কর ঝক্কর প্রকৃতির বাসগুলো কাউন্টার বাস সার্ভিস সেজেছে। বাসের ভেতরে নাজুক অবস্থা। প্রায় সময় এসব লক্কর ঝক্কর বাসগুলো রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।’
আর এক বাসযাত্রী আলেয়া আক্তার বলেন, ‘বিকল্প বা লোকাল বাস সার্ভিস না থাকায় কাউন্টার বাসগুলো যাত্রীদের ওপর জুলুম করছে। প্রতিবাদীদের আরো বেশি ভাড়া দিয়ে সিএসজি চালিত অটোরিকশাতে চলাচল করতে হবে।’
অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে জলসিড়ি এক্সপ্রেস (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালক রেজাউল করীম রুমী বলেন, ‘তিনি এই ব্যাপারে কিছুই নাকি জানেন না।’
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ জানান, ‘অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।’
অপরদিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, ‘অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে জানতে বাস মালিক সমিতিকে তিনি তলব করবেন বলে জানান।’
অন্যদিকে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. আকতারুন নেছা বলেন, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তিনিও জানেন না। এ ছাড়া খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।’
Comments
comments