কিশোরগঞ্জে কপি পরিবারের শীতকালীন সবুজ রংয়ের সবজি ব্রোকলি আবাদ বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে। ভালো বাজারদর ও ক্রেতা চাহিদার কারণে জেলার সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে এর চাষ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ জেলার কিছু অঞ্চলের কৃষক ব্রোকলি চাষ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় উৎপাদিত ব্রোকলি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক কৃষক পুষ্টিসমৃদ্ধ এ সবজি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফুলকপির মতো সবুজ পাতাসমৃদ্ধ ব্রোকলি ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক জনপ্রিয়। এছাড়া চীন, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর কয়েকটি উন্নত দেশেও ব্রোকলির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলার আদিত্যপাশা গ্রামের আলাউদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, এখানকার উৎপাদিত ব্রোকলি এখন জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। মুনাফাও হচ্ছে আশানুরূপ। ফুলকপির মতো দেখতে হলেও ব্রোকলি চাষে উৎপাদন খরচ কম বলে জানান। তিনি আরও জানান, সবজি চাষের মতো স্বাভাবিক কৃষি জমিতে ও বৈরী আবহাওয়ায় ব্রোকলি সহজেই চাষ করা যায়।
চাষিরা জানান, ব্রোকলির বাজারদর বেশ ভালো। ফুলকপির মতো একই ফসল হওয়ার পরও বেশি দামে তা বাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে। পাশাপাশি এ সবজি অনেকটা রোগসহিষ্ণু হওয়ায় ফুলকপির চেয়ে তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ কম।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চাষিরা আগে গতানুগতিক পুরনো পদ্ধতিতে চাষ করত। ফসল ফলিয়ে লাভবান হতে পারত না। বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৬৫ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে ৪০-৫০ হাজার ব্রোকলি গাছ তৈরি করা যায়। প্রতি গাছে একটি করে ব্রোকলি হয়।
জানা গেছে, ক্রুসিফেরি গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ফুলকপির মতো সবুজ পাতাসমৃদ্ধ এ সবজিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফোলেট ও আঁশ রয়েছে। এটি হৃদরোগ, বহুমূত্র ও ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ব্রোকলি জারণরোধী ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ সরবরাহ করে কোষের ক্ষতিরোধ করে। ব্রোকলিতে পাওয়া যায় উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’। মানুষের শরীরে প্রতিদিন ভিটামিন ‘সি’র যে চাহিদা রয়েছে, মাত্র ১০০ গ্রাম ব্রোকলিতে সে চাহিদার ১৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল আলম বলেন, ‘সবজি জোন হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ জেলার চাষিরা গতানুতিকভাবে একমুখীভাবে সবজি চাষ করে আসছেন। এজন্য সবজি চাষ বিশেষ আকর্ষণ ও লাভজনক করে তুলতে ব্রোকলি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’
Comments
comments