সারা দেশে প্রায় সব জায়গায় চাঁপা ফুল চোখে পড়ে। সোনালি বা হলদে ওই চাঁপা ছাড়াও আরেকটি চাঁপা আছে সাদা রঙের। তুলনামূলক দুর্লভ এই ফুলকে ডাকা হয় সাদা চাঁপা বা শ্বেতচাঁপা নামে। ময়মনসিংহের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত আলেকজান্ডার ক্যাসেলের দক্ষিণ দিকে দুপাশে দুটি শ্বেতচাঁপার গাছ আছে। ছবিটি ওখান থেকে তুলেছি। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম ফুল ফোটার দিনে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর মিষ্টি সুগন্ধে মন ভরে যায়। আরও দুটি শ্বেতচাঁপার গাছ রয়েছে সেখানে শশীলজের দুপাশে। এ ছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ১টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ মিলন স্মৃতিস্তম্ভের পাশে ১টি , আর্মি স্টেডিয়ামের ডান পাশের দেয়াল লাগোয়া মাঠের ধারে কয়েকটি শ্বেতচাঁপার গাছ রয়েছে।
শ্বেতচাঁপা শাখা-প্রশাখাময়, চিরসবুজ বৃক্ষ। সাধারণত মাঝারি আকৃতির হলেও ময়মনসিংহের শ্বেতচাঁপার গাছ চারটি কালের আবর্তে উঁচু বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এর কান্ড সরল ও উন্নত। ছোট ডাল নরম ও লোম দ্বারা আবৃত। পাতা ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা, প্রায় মসৃণ, বর্শাফলক আকৃতির। কচিকান্ডের আগায় ফুল ফোটে। সাদা পাপড়ির ফুল তীব্র সুগন্ধিযুক্ত। পাপড়ির সংখ্যা ১৫টি পর্যন্ত হতে পারে। ফুল সুরভিত হলেও এর রস তেতো। তাই এর প্রতি ভ্রমর আকৃষ্ট হয় না। গাছের ছাল শুকিয়ে চিবালে এই তেতো স্বাদটি টের পাওয়া যায়। গুচ্ছাকারে আঙুরের মতো থোকায় থোকায় ফল ধরে।
বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ চাঁপার জন্মস্থান। অফিস-বাড়ির আঙিনা ও বাগানে চাঁপাগাছ লাগানো যায়। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এটি খুব পবিত্র ফুল। শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধমূর্তি তৈরিতে এর কাঠ ব্যবহৃত হয়। বসন্ত ও গ্রীষ্মে চাঁপার সৌরভে চারদিক ভরে ওঠে। বলে রাখা ভালো, বাংলায় অনেক ফুলের নামের সঙ্গে চাঁপা যুক্ত হলেও সব ফুল একই পরিবারের নয়। শ্বেতচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম Magnolia alba এবং এটি Magnoliaceae গোত্রের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে White Champaca, White Champak ইত্যাদি নামে পরিচিত। কাঠ নরম কিন্তু স্থায়ী। চাঁপার অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। বাকল ও ফুল বাতরোগের ওষুধ। মাথাব্যথা, পেটফাঁপা, ফোঁড়া ও অগ্নিমান্দ্যে এটি উপকারী।
লেখকঃ চয়ন বিকাশ ভদ্র
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।
Comments
comments