উজানের ঢলে নেমে আসা পানি বাড়ছেই। থামার নাম নেই, এই বুঝি শেষ হয়ে গেল কৃষকের স্বপ্ন। দিন-রাত পরিশ্রম করে এ সোনা রঙের ধান ফলায় তারা। স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এ শঙ্কায় দিন যাচ্ছে কৃষকের। পানি বাড়ার প্রবণতা এমন যে আরেকটু বাড়লে সোনার ফসল তলিয়ে যাবে পানির নিচে। হাওরের ৭৩টি ফসল রক্ষা বাঁধ প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে কালবৈশাখী ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ৫৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ ঝুকিতে রয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ইটনার ধনু নদীর পানি বিপদসীমায় রয়েছে। বিপদসীমা অতিক্রম করে যে কোন সময় নিমজ্জিত করতে পারে হাওরের ফসল। মেঘনা নদীর পানি এখন কমতে শুরু করেছে।
করিমগঞ্জে ধনু, নাগচিনি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর মোহনা ও চরাঞ্চলের কিছু নিচু জমি তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার বাংগালপাড়া ইউনিয়নের রাখানী হাওরে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভৈরবের মেঘনা নদী পানি বৃদ্ধির কারণে উঠতি বোরো ধানের যে ক্ষতির আশংকা করা হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কমতে থাকায় কৃষকেরা আশার মুখ দেখছে। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি না হলে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত বোরো ধান কেটে নিতে পারবে। এদিকে কৃষি বিভাগ এলাকায় মাইকে প্রচার করছে ৮০% ধান পাকলে দ্রুত ধান কেটে নিতে।
সূত্র জানায়, জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ইটনা উপজেলাতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে ২৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর। কৃষি বিভাগ বলছে উজানের ঢলে প্রায় ৭৪৯ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪২ শতাংশ আধা পাকা ধান কাটা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষতি না হলে কৃষক তাদের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ছাইফুল আলম জানান, হাওরের ৪২ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতি হয়নি। ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষতি না হলে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যাবে।
ছবি- রাকিবুল হাসান রোকেল।