ঢাকাশুক্রবার , ১২ জুন ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জর্জ ফ্লয়েড ও বর্ণবাদী বাঙালি

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুন ১২, ২০২০ ৫:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জর্জ ফ্লয়েড নামে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এখন উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বহু বছরের চেপে রাখা ক্ষোভ যেন ফেটে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিক থেকে বিশ্বের সব চেয়ে অগ্রগামী জাতি। কিন্তু এই রাষ্ট্রের সৃষ্টি-লগ্ন থেকেই বর্ণবাদ তার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে বসে আছে। মার্কিন সভ্যতা এখানে এসেই আর দৃশ্যমান থাকে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের বর্ণবাদী আচরণে বাংলাদেশের মানুষও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশে কি বর্ণবাদ নেই? বাস্তব পরিস্থিতি কী বলে?

বাংলাদেশে বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচনে ‘ফর্সা ও সুন্দরী’ পাত্রীকে গুরুত্ব দেয়া হয়৷ শতকরা একশ ভাগ বিয়ের বিজ্ঞাপনেই বলা হয় সুন্দরী পাত্রী চাই।এটা যে শুধু পাত্র পক্ষ থেকে করা হয় তা নয়, পাত্রী পক্ষও এটা প্রচার করে পাত্র খোঁজার জন্য।অধিকাংশ বিজ্ঞাপনে সরাসরি পাত্রীর গায়ের রঙ ফর্সা উল্লেখ করা হয়৷ খুব কম বিজ্ঞাপনেই পাত্রীপক্ষ পাত্রীর শ্যামলা বা কালো রঙের কথা উল্লেখ করে।সুশ্রী, সুন্দরী, প্রকৃত সুন্দরী, অপূর্ব সুন্দরী,রূপসী,অসাধারণ রুপসী, রুপবতী,সুরুপা,অপরুপা,অপ্সরী,দুধে আলতা- এ ধরনের বিশেষণ ব্যবহার করে সৌন্দর্যকে বিজ্ঞাপিত করা হয় বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনে৷ এটাই আসলে সবচেয়ে বড় বর্ণবাদ৷ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই বর্ণবাদ রয়েছে৷ তাই যদি না হবে, রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপন এবং বিক্রি বাড়বে কেন? কেন বাড়বে এত বিউটি পার্লার? মানুষ কেন রঙ ফর্সা করার দিকে ঝুঁকবে? বহু বছর থেকে প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে” গায়ের রং কালো হওয়ার কারনে একটি মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে এবং স্বর্গ থেকে ফেয়ার এন্ড লাভলী এসে মেয়েটিকে অপরুপ সুন্দরী বানিয়ে দিচ্ছে, অবশেষে ফেয়ার এন্ড লাভলী’র কল্যাণে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে”-এর চেয়ে বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন আর হতে পারে? কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে বা কোন নারীবাদী সংগঠন এধরনের বর্ণবাদী বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে? উল্টো নাবালিকা থেকে কিশোরী, যুবতী থেকে বৃদ্ধা সবাই সুন্দরী হওয়ার জন্য শুধু ফেয়ার এন্ড লাভলীই মাখছেনা, সকাল বিকাল বিউটি পার্লারে দিচ্ছে লম্বা লাইন। শুধু মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ কি আজকাল ছেলেরাও তো ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডশাম মেখে ফর্সা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

বাংলাদেশে যে নারীর গায়ের রঙ কালো বা প্রচলিত দৃষ্টিতে সুন্দর না, তার পরিবারকে বেশি যৌতুক দিতে হয় এবং নির্যাতনও তাদের ওপরই বেশি হয়। ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাথী আক্তার নামে এক গৃহবধূকে তার বাড়ির একটি কক্ষ ভেঙে উদ্ধার করে পুলিশ৷ কালো ও খাটো হওয়ার কারণে তার স্বামী তাকে বাড়ির একটি কক্ষে ছয় মাস ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল ।জোর করে বিষপান করিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।বাংলাদেশে গ্রামে,গন্জে বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সমাজে প্রতিদিন এরকম শতশত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।তবে শুধু নিচের স্তরেই বর্ণবাদী ঘটনা ঘটেনা, শিক্ষিত,ঊচ্চবিত্ত এবং সুশীল সমাজেও বর্ণবাদী ধ্যাণধারনা প্রকট।ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু বিয়ে করেন ২০১৫ সালে।তার বিয়ে নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহল রীতিমতো সমলোচনার ঝড় বইয়ে দেয়; কারণ তাঁর বরের গায়ের রঙ ছিলো কালো।

বাংলাদেশে বর্ণবাদ শুধু প্রকটই না এখানে বানিজ্যিকভাবে বর্ণবাদের চাষাবাদ করা হয়।সেজন্য তথাকথিত রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ হয়না বরং তৈরি হচ্ছে হাস্যকর সব বিজ্ঞাপন।সেই বিজ্ঞাপন প্রচার করছে দেশের সব গণমাধ্যম৷ কোনো প্রতিষ্ঠিত তারকা কোনোদিন বলেননি, ‘রং ফর্সা করার কোনো প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনের মডেল হবো না’ ; কোনো মিডিয়া হাউজ একবারও বলেনি, ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বা এমন অন্য কোনো বিজ্ঞাপন আর নেবো না’। অনেক মেধাবী, ঊচ্চশিক্ষিত, যোগ্য, প্রতিষ্ঠিত, সভ্য, ভদ্র , ভালো পরিবারের মেয়ে শুধুমাত্র গায়ের রং কালো হওয়ার কারনে বিয়ের বয়স পার হয়ে যায়, উঠতে বসতে শুনতে হয় নানান কটু কথা, সমাজ এবং পরিবারের মানুষের বিরুপ আচরণের কারনে আত্বহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিতে হয়।পক্ষান্তরে, অনেক অশিক্ষিত, মুর্খ, অযোগ্য, অসভ্য, নির্লজ্জ মেয়ে শুধুমাত্র গায়ের রং ফর্সা হওয়ার কারনে সমাজ তাকে মাথায় তুলে নাচে, কেউ কেউ হয়ে যায় দেশসেরা মডেল, সুপারহিট নায়িকা, দেশসেরা গায়িকা, যুবসমাজের ক্রাশ এবং মিডিয়ার ত্রাশ; অনেক জনপ্রতিনিধি, বড় বড় শিল্পপতি তাকে বিয়ে করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পরে।

যে সমাজে গায়ের কালো বা ফর্সা রং যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে ওঠে, সেখানে দিনে-রাতে জর্জ ফ্লয়েডের মতো কালো বর্ণের লাখো মানুষ নিরবে,নিভৃতে প্রতিনিয়ত নিগৃহিত হওয়ার খবর কজনইবা রাখে; আমরা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোক দেখানো প্রতিবাদ করি আর কথায় কথায় বলি ”জাতের মেয়ে কালো ভালো, নদীর জল ঘোলা ভালো”।

পুনশ্চঃ “জাতের মেয়ে কালো ভালো” কথাটিতেই বর্ণবাদ প্রবলভাবে স্পষ্ট। আমরা জাতি হিসেবে এতটাই বর্ণবাদী যে আমাদের একটা খুবই প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনই সম্পূর্ণ বর্ণবাদের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি!

লেখক: উজ্জল হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments