কোরবানীকে সামনে রেখে নাটোরের গরু খামারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। করোনা প্রভাবে কোরবানীর গরু বিক্রি নিয়ে আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা করছেন জেলার প্রায় ৯ হাজার গরু খামারী। তবে সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং এবং কোরবানীর পশু অন্যত্র স্থানান্তর করতে বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা করা গেলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারীরা। অন্যদিকে, খামারীদের লাভের বিষয়টি চিন্তা করে বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিংয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অফিসের হিসেব মতে, কোরবানীকে সামনে রেখে নাটোর জেলায় প্রায় ৩ লাখ ২ হাজার ১১৬টি গবাদি পশুর প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছর জেলায় কোরবানীর চাহিদা মোট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৮টি গবাদি পশুর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১২৮টি পশু। যার বাজার মোট বাজার মূল্য প্রায় ৮’শ কোটি টাকা। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক হলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন খামারীরা। কিন্তু করোনা প্রভাবে আর্থিকভাবে লোকসানের আশঙ্কা খামারীদের।
নাটোরের ডালসড়ক এলাকার খামারী রেকাত হাজি জানান, এখন পর্যন্ত দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ী জেলার স্থানীয় খামারীদের সাথে যোগাযোগ করেননি। করোনা প্রভাবে ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে সাহস করছেন না। এদিকে বাজারগুলোতে এখন জমেনি গরু বেচাকেনা। এছাড়া করোনার কারণে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে দ্বিগুন। তাই তারা বিদেশী চায়না ঘাস ও দেশীয় গো-খাদ্য খাইয়েই গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। অনেক খামারী ব্যাংক থেকে বড় ধরণের ঋণ নিয়ে গরুর পিছনে বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যাশিত মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে তারা আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বেন।
কুতুব আলী নামক আরেক খামারী জানান, কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর আমরা গবাদি পশু লালনপালন করে থাকি। তাই এবারও আশায় বুক বেধেছিলাম। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে লালন পালন করায় এখানকার গরুর চাহিদা দেশজুড়ে। সাধারণত বছরের এই সময়টাতে দুর দুরান্তের ক্রেতার সমাগমে মুখর থাকে খামারগুলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত ক্রেতার দেখা না মেলায় দুঃচিন্তায় রয়েছি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, কোনবানীর পশু বাজারজাতের জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে খামারীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে করোনাকালিন সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, করোনাকালীন সময়ে কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনলাইনে গরু বিক্রির অ্যাপ তৈরী করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র স্থানে গবাদি পশু পাঠানোর জন্য সহযোগিতা করবে জেলা পুলিশ। এজন্য জেলার গবাদি পশু পালনকারী খামারী, ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে পুলিশ। পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি পশুবাহী ট্রাকে যেন চাঁদাবাজি না হয়, সেজন্য কঠোর নজরদারি থাকবে।
Comments
comments