ঢাকাশুক্রবার , ৩ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনা সংক্রমণ, উদাসীনতা ও আগামীর সন্ধান

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ৩, ২০২০ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আপনি অভিভাবক। আপনার সন্তানকে করোনা থেকে বাঁচতে চিল্লাচিল্লি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করিয়ে ছুটলেন রাঙামাটির পাহাড় আর কক্সবাজারের সাগরে অবগাহন করতে। মনে হলো এই ছুটির জন্যই আপনি এতোদিন অপেক্ষায় ছিলেন। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলো সবাইকে ঘরে রাখার জন্য।

আপনি প্রবাসী। আপনি ছিলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা, জাতীয় বীর। আপনি নির্বোধের মত করোনা সাথে নিয়ে দেশে ফিরে নিয়ম মেনে মাত্র কয়েকটা দিন ঘরে থাকতে পারলেন না। বিয়ের দাওয়াত খেলেন, নিজে বিয়ে করলেন। সবখানে ঘুরে বেড়ালেন উৎসবমুখর। করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে দিলেন শহর থেকে গ্রামে, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি।

আপনি নেতা, আপনি মন্ত্রী। আপনি প্রথমেই করোনাকে নিলেন সাধারণ সর্দির চেয়েও হালকাভাবে। বললেন আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী। বললেন আমরা ইউরোপ, আমেরিকার চেয়েও বেশি প্রস্তুত। আপনি নিজেই সামাজিক বা শারিরীক কোন দূরত্ব রক্ষা না করেই দলবল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন। কেউ কেউ আবার ঢাক ঢোল পিটিয়ে হাত ধোঁয়ার বেসিন উদ্বোধন করলেন। আপনাদের আশ্বাসে এবং সবকিছু হালকাভাবে নেওয়ার কারণে সাধারণ জনগণ করোনাকে আমলেই নিলো না।

আপনি তরুণ প্রজন্ম। আপনি পান থেকে চুন খসলেই সারাদিন ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করেন। অথচ আপনিও করোনাকে নিলেন মজা হিসেবে, ট্রল করলেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডা জমালেন, ফাঁকা গলিতে দলবল নিয়ে ক্রিকেটে খেললেন। অথচ এই দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আপনিও জাতীয় বীর হতে পারেন।

আপনি ব্যবসায়ী। আপনি করোনার এই মহামারীকে নিলেন জীবনের আখেরি মুনাফা কামানোর সুযোগ হিসেবে। সারা দুনিয়ার ব্যবসায়ীরা সাধ্যমত সরকারকে সহায়তা করছে। আর আমাদের প্রশাসনকে এখনও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আপনার ২০ টাকার মাস্ক ২০০ টাকা আর ৮০ টাকার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৫০০ টাকায় বিক্রি ঠেকাতে।

আপনি গুজব রটনাকারী। মানবসভ্যতার কঠিন এই বিপর্যয়েও আপনি অসহায়, নির্বোধ মানুষগুলোকে থানকুনি পাতার পেছনে ছোটালেন।

আপনি সুশীল। সারাদিন পত্রিকা আর টকশোতে ঝড় তুললেও এই ক্রান্তিকালে থাকলেন নিস্ক্রিয়। কেউ কেউ জনগণের জন্য কিছু না করে এখনও সরকারের কড়া সমালোচনা করে সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটলেন।

আপনি ডাক্তার। মানবসভ্যতার ভয়াবহ এই সময়ে সত্যিকারের ফেরেস্তা বা দেবতা হওয়ার দারুণ সুযোগ মনে হয় হারিয়ে গেলো। রাত-দিন শত প্রতিকুলতার মধ্যেও রুগির সেবা করা আপনি করোনার ভয়ে সাধারণ রুগির সেবাও বন্ধ করে দিলেন। সারা দুনিয়ায় আপনাদের যোগাযোগ। বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দিকে তাকিয়ে না থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তো পিপিই যোগাড় করে স্বাভাবিক সেবাটা চালু রাখতে পারতেন।

আপনি সমাজ সেবক। কোন স্বাস্থ্যবিধি এবং নিয়মনীতি না মেনে ‘ক্যামেরা যেখানে ত্রাণ সেখানে’ নীতিতে গরীব অসহায় মানুষগুলোকে ঘরে না রেখে উল্টো ঘর থেকে রাস্তায় নামালেন। ত্রাণ দেওয়ার চেয়ে মনে হচ্ছে ছবি তোলাতেই কারও কারও মনোযোগ বেশি। আবার সেই অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ত্রাণের বস্তা হাতে ছবি ফেসবুকে দিয়ে তাদেরকে করলেন চূড়ান্ত অপমান।

আপনি ইসলামের সেবক। সারা দুনিয়ায় মুসলমান মরে সাফ হয়ে গেলেও আপনি বলছেন মুসলমানদের করোনা হবে না। এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন ওয়াজ মাহফিলসহ গণজমায়েত। যদিও ভারতে তাবলিগ জামাতের জমায়েত থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু লোক করোনা আক্রান্ত হয়ে কিছু লোক মারাও গেছে।

আর হ্যাঁ আপনি, আপনি সাধারণ জনতা। দিনের মধ্যে যতবার সৃষ্টিকর্তার নাম নেন তার চেয়ে বেশিবার সরকারকে গালি দেন। আপনরে হাতেপায়ে ধরেও ঘরে রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আর্মি নামানোর পর আপনি রাস্তায় বের হলেন আর্মি কি করে, তাঁদের কাছে কি কি অস্ত্র আছে দেখার জন্য, কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলে তাকে দেখার জন্য দল ধরে জানালায় উঁকি মারেন, গভীর রাতে থানকুনি পাতা খুঁজে বেড়ান।

পলাশীর যুদ্ধে বেঈমানীর জন্য মীর জাফর আলী খাঁ এর মত সুন্দর একটি নাম এখন ‘মীরজাফর’, একাত্তরে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ‘রাজাকার’ শব্দটি এখন গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

করোনার এই ঝড় ইনশাআল্লাহ একদিন থেমে যাবে। হয়ত আমরা অনেকেই মারা যাবো। আমি মৃত্যু ভয়ে মুষড়ে যাইনি। ভাবছি আমার সন্তানের কথা, ভাবছি করোনা পরবর্তী যে প্রজন্ম বেড়ে উঠবে তাঁরা আমাকে, আপনাকে এই মু্র্খতা, কান্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য কি কি বলে গালি দিতে পারে- ‘আঁতেল, মুর্খ, ভন্ড, বেঈমান, প্রতারক ও লোভী’!

তাই আসুন আগামী প্রজন্মের কাছে নির্লজ্জ উদাহরণ তৈরি না করি। বাঙালি বীরের জাতি। কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস পৌছানোর আগে আপনি পৌছে যান, নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে আগুন নেভাতে লেগে যান। রানা প্লাজা ধসের পর আপনারা কীভাবে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে আহতদের উদ্ধার করেছেন তা বিশ্ববাসী দেখেছে। অথচ আজ আপনার প্রতিবেশী এমনকি কাছের কারও সাধারণ সর্দি কাশিকে আপনি ভয় পাচ্ছেন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না, বিনা চিকিৎসায় মারা গেলে তাঁর লাশ দাফনেও বাধা দিচ্ছেন। আপনার ভেতরের মানবিকতাটাকে একটু জাগিয়ে তুলুন। অযথা গুজব রটাবেন না। ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও আজ অজানা ভাইরাসের কাছে পরাস্ত। সরকার কিছুটা বিলম্বে হলেও সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে ঘরে থাকুন। সাধ্যমতো আশেপাশের অসহায় মানুষকে সাহায্য করুন। সাহায্য গ্রহীতার ছবি ফেসবুকে দিয়ে তাঁদের অপমান করবেন না। চলুন সকলে মিলে আমাদের সন্তানদের জন্য একটি কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন পৃথিবী রেখে যাই।

লেখক: উজ্জল হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments