তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ইচ্ছে মতোই। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এই পৌরসভায় ৫জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শওকত উসমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপের প্রচারণা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সন্ধ্যা হলেই চায়ের স্টলে তাদের নিয়ে শুরু হয় চুলছেড়া বিশ্লেষণ।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তরিকুর মুশতাক রানার সহধর্মিনী মিসেস সালমা আনিকা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিপাকে পড়বে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী শওকত উসমান বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কটিয়াদী পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ৪৬৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৩৬ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৭৩০ জন। এখানে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি প্রায় এক হাজার। তাই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে নারী ভোটারই হবে ফ্যাক্টর।
নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই পৌরসভায় মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন দলীয় এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় চার প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র শওকত উসমান শুক্কুর আলী, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি আম প্রতিকের প্রার্থী আব্দুল বাতেন। একমাত্র স্বতন্ত্র মোবাইল ফোন প্রতিকের প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নারী নেত্রী মিসেস সালমা আনিকা। এছাড়া ৩টি সংরক্ষিত আসনে মোট ১১ জন এবং ৯টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী এবারের ভোট যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সরেজমিনে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে হিসাব-নিকাশ করেই পছন্দের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। এ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। যদিও প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সমর্থকরা শীর্ষে থাকলেও নেপথ্যে অনেক নেতাকর্মীই নিস্ক্রিয়। পাশাপাশি মনোনয়নের অন্তর্দ্বন্দ্বে আওয়ামীপন্থি সমর্থকরা প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে নৌকার বিরোধিতা করছেন। ফলে ৩০ তারিখ নৌকার বিজয় পেতে চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অন্যদিকে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের। একই দলের দুইজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে সুবিধা নিবে বিএনপি। ফলে নির্বাচনে কৌশলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধানের শীষ মার্কায় ভোট চাচ্ছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
তবে এই পৌরসভায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যায় বেশি প্রায় এক হাজার। তাই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে নারী ভোটার ফ্যাক্টর হওয়ায় চুলছেড়া হিসাব কষছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। জয়-পরাজয় যাইহোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভোটাররা বলছেন, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন ভোটাররা। সমাজের নানামুখী উন্নয়ন, ইভটিজিং বন্ধ, সন্ত্রাস নিধন, মানুষের পাশে এগিয়ে আসবেন এমন যোগ্য, সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকেই ভোট দিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচিত করবেন বলে জানান ভোটাররা।
এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী শওকত উসমান শক্কুর আলী জানান,‘ দেশে নানা মুখী উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষ আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কিছুতে পাত্তা দেয় না। নৌকার বিরোধিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, গুটি কয়েকজন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত কারণে নৌকার কোন সমস্যা হবে না। বরং কেউ নৌকার বিরোধিতা করলে প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।’
ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ জানান, ‘প্রচার-প্রচারণায় নানান ভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলা, মাইকিং বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে তিনি আরো বলেন, ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে ধানের শীষ (বিএনপি) বিপুল ভোটে জয় পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা আনিকা বলেন, ‘আমার কাছে জনগণ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সার্পোট। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত জনগণ আমার পাশে আছে-থাকবে। ‘ইনশাআল্লাহ’ ৩০ জানুয়ারি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করে ইতিহার তৈরি করবেন বলে জানান তিনি।’
আর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘কটিয়াদী পৌরসভায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে এবং ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।’
Comments
comments