পুঁজিবাজার নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যতই আশার কথা বলুক, বাস্তবের সঙ্গে এর মিল পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে `স্থিতিশীলতা অনুপস্থিত। প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে বাজার। বড় পতনের পর কালেভদ্রে দু-এক দিন ঘুরে দাঁড়ালেও তা ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বাজার চিত্র নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।.
সম্প্রতি বাজার চিত্রে দেখা গেছে, লকডাউনের আগে বাজারে বড় পতন হয়। পরবর্তী সময়ে লকডাউন শুরুর প্রথম তিন দিন সূচকের বড় ধরনের উত্থান পরিলক্ষিত হয়। তিন কার্যদিবসে সূচক
২৪৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৩৩৭ পয়েন্টে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস `তুলে দেয়া হয়। এর পরের দুই কার্যদিবসে সূচক তিন শতাংশের বেশি কমে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে। গতকাল যা সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে।|
গত এক মাসের (৩০ কার্যদিবস) বাজার চিত্রে দেখা গেছে, এ সময় পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে।| এর জের ধরে এ সময় বাজার মূলধন কমে ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সূচক কমেছে এক হাজার পয়েন্ট করে।~ ৩০ কার্যদিবস আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটের বাজার মূলধন ছিল চার লাখ `৮২ হাজার কোটি টাকা। গতকাল যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকায়।|
বাজারের পরিস্থিতি ভালো করার জন্য তৎপর বিএসইসি। পুঁজিবাজার যাতে ভালো হয় সেজন্য নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে বাজারের স্বার্থে কিছু কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করেছে। £পাশাপাশি প্রাইমারি মার্কেট ভালো করার জন্য এ সময় দেয়া হয়েছে রেকর্ড-সংখ্যক নতুন কোম্পানির অনুমোদন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তথা বাজারের স্বার্থে কাজ করছি। ~তাদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তারপর বাজার কেন স্বরূপে ফিরছে না সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।.
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাজারে লেনদেন যাতে বাড়ে সেজন্য ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও সূচক কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে আসলে বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন হতে হবে।| তারা কোনো কারণে ভীত হয়ে যদি শেয়ার ছেড়ে দেন তাহলে বাজারে এর বৈরী প্রভাব পড়ে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে এ পরিস্থিতিতে সূচক হ্রাস পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ বাজারে এখনও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে এ মার্কেটে অতিমূল্যায়িত শেয়ার নেই বললে চলে। এ পরিস্থিতিতে সূচক যেভাবে কমছে তা কাম্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এখনও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। কিছু শেয়ারের দর তলানিতে রয়েছে।| এ পরিস্থিতি বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া বাজারে বড় পতন কাম্য নয়। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত।| তারা ধৈর্যচ্যুত হয়ে গেলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
একই বিষয়ে নাম প্রকাশে একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, এ কথা ঠিক।| কিন্তু তারপর মনে হচ্ছে কেউ না কেউ বাজার থেকে নিজেদের ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।|
Comments
comments